The conspiracy theory about the dollar |
হায় বন্ধু,
পৃথিবী যেভাবে সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় একই ভাবে বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতি মার্কিন কারেন্সি ডলারকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় । বর্তমান পৃথিবীর প্রায় ৯০% লেনদেন মার্কিন ডলারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় ।
বিশ্বের এত এত দেশের মুদ্রাকে পেছনে ফেলে কী করে ডলার বিশ্ব অর্থনীতিতে একক আধিপত্য বিস্তার করেছিল , কী করে ডলার তৈরি হয়, ডলারের মধ্যে কি এমন রহস্য লুকিয়ে আছে যা আপনাকে জানতেই হবে এই নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। চলুন শুরু করা যাক। আর্টিকেল শেষে আপনি শিখবেন
১.কি দিয়ে মার্কিন ডলার তৈরি করা হয়?
মার্কিন ডলারে ব্যবহৃত কাগজে ৭৫% সুতি এবং ২৫% লিলেন থাকে । নোট মুদ্রনের জন্য ব্যবহৃত কালি মার্কিন ট্রেজারি ব্যুরো অব এনগ্রেভিং অ্যান্ড প্রিন্টিংয়ে তৈরি করা হয় ।
ফেডারাল ব্যাংকের মুদ্রনের চিত্র ব্যতীত নোটের সামনের দিকের চিত্রগুলি এবং শিলালিপি মুদ্রনের জন্য, ব্যাংকের ডিজিটাল এবং বর্ণমালা কোড ব্যবহার করে চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্য়যুক্ত কালো কালি ব্যবহার করা হয় ।
নোটগুলির পিছনে থাকা চিত্র এবং শিলালিপি গুলি সবূজ কালি দিয়ে মুদ্রিত হয় যার চৌম্বকীয় বৈশিষ্ট্য নেই । আমরিকার বৃহত্তম নোট তৈরির কারখানা হলো দ্য ব্যুরো অফ এনগ্রেভিং অ্যান্ড প্রিন্টিং (সংক্ষেপে বি ই পি) । এটি তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াংশিটনে ১৮৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ।
ডলারের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টপ সিক্রেট এবং পেটেন্ট করা বৈশিষ্ট্য় হলো সবুজ রং । ডলার তৈরির যন্ত্রটি ঘন্টায় ডলারের ১০ হাজার পাতা তৈরি করে । তৈরি হওয়ার পর ৩ দিন ধরে নোটগুলো শুকনো হয় ।
আরো পড়তে পারেন
২. কি করে মার্কিন ডলার বিশ্ব অর্থনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে?
প্রশ্নটির উত্তর ভালো করে বুঝতে হলে আমাদের কে আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে ভালো করে ধারণা নিতে হবে । ফিরে তাকাতে হবে ইতিহাসের দিকে ।
Money বা অর্থ সাধারণত তিন প্রকার ।
ক. Commodity Money ( পন্য মুদ্রা )
খ. Commodity -Based Money ( পন্য ভিত্তিক মুদ্রা )
গ. Fiat Money( হুকমি মুদ্রা )
অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রথম দিকে মানুষ "পন্যের বিনিময়ে পন্য" প্রথার মাধ্যমে তাদের প্রয়োজন মেটাতো । যাকে বলা হয় Commodity Money ( পন্য মুদ্রা )। অর্থনৈতিক ইতিহাস হতে জানা যায় মানুষ বিভিন্ন ধাতব পদার্থ থেকে শুরু করে খাদ্য শস্যসহ বিভন্ন পন্য Commodity Money হিসেবে ব্যবহার করে।
কিন্তু সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে মানুষের প্রয়োজনও বেড়ে গেল । এর ফলে আসলো Commodity -Based Money ( পন্য ভিত্তিক মুদ্রা )। এ ব্যবস্থায় মূলব্যান ধাতু যেমন: সোনা, রূপা ইত্যাদি ব্যাংকে জমা রেখে তার সম পরিমান কাগুজে মুদ্রা সরবরাহ করা হতো ।
এবং এ কাগুজে মুদ্রার গায়ে লেখা থাকতো এই নোট যে গ্রাহকের হাতে থাকবে গ্রাহক যখন চাইবে ব্যাংক তখনই গ্রাহককে সমমূল্যের স্বর্ণ দিবে। অনেকটা বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংক নোট গুলোর মতো । যাতে লেখা থাকে চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে ------- টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে ।
যেহেতু কাগুজে মুদ্রাগুলো সরাসরি সোনার সাথে সম্পর্কিত ছিল তাই এগুলোকে বলা হতো Commodity -Based Money বা পন্য ভিত্তিক মুদ্রা ।
যে ধরণের মুদ্রা সরাসরি কোন পন্যের সাথে সম্পর্কিত নয় বরং রাষ্ট্রের ঘোষনার মাধ্যমে এগুলোর মূল্য নির্ধারিত সেগুলোকে বলে Fiat Money বা হুকমি মুদ্রা ।
যেমন ২০১৬ সালের ৮ই নভেম্বর ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক ঘোষণার মাধ্যমে ৯ ই নভেম্বর থেকে ভারতের ৫০০ ও ১০০০ রূপির নোট বাতিল হয়ে যায় । যেহেতু ফিয়াট মানি সরাসরি কোন পন্যের সাথে সম্পর্কিত নয় তাই সরকারগুলোর ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপর এগুলোর ভাগ্য নির্ধারণ করে।
আরো পড়তে পারেন
ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেন ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্রাজ্য এবং সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ মজুদকারী দেশ । এই কারণে ব্রিটেন ছিল প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি এবং লন্ডন ছিল বিশ্ব ব্যাংকিংয়ের প্রধান কেন্দ্র । আর ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড স্টর্লিং ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা ।
এরপর ১৯১৪ সালে ইউরোপে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ । ১৯১৮ সাল পর্যন্ত চলা এ যুদ্ধের প্রথম তিন বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে বিশ্বযুদ্ধ থেকে দূরে রাখে । এ অবস্থায় ইউরোপের দেশগুলোর যখন যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহে নাভিশ্বাস অবস্থা । ঠিক সে সময় যুদ্ধরত দেশগুলোতে অস্ত্র, রসদ, ভোগ্যপন্য় ইত্যাদি রপ্তানির মাধ্যমে মার্কিন অর্থনীতি তখন পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিনত হয়েছে ।
এরপর ১৯২৯ সালে ওয়ালস্ট্রিট এ শেয়ার বাজার ধ্বসের ঘটনায় বিশ্বব্যাপি মন্দা দেখা দেয় । যার কারণে বাধ্য হয়ে ব্রিটেনসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো স্বর্ণভিত্তিক মুদ্রা ব্যবস্থা (Commodity -Based Money) পরিত্যাগ করে ।
অন্যদিকে এর ঠিক বিপরীত দৃশ্য তৈরি হয় মার্কিন ডলার (U.S.D) এর ক্ষেত্রে । মার্কিন ডলার তখনো স্বর্ণমান কে আগলে রাখে। ফলে অচিরেই মার্কিন ডলার বৈশ্বিক মুদ্রা (Global Currency) তে পরিণত হয়।
এ দিকে ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে আগের মতোই প্রথম আড়াই বছর যুক্তরাষ্ট্র নিজেদেরকে যুদ্ধ থেকে দূরে রাখে । এবং ঠিক আগের মতোই যুদ্ধরত দেশগুলোতে অস্ত্র, রসদ, ভোগ্যপন্য় ইত্যাদি রপ্তানির করে ।
আরো পড়তে পারেন
কিন্তু এবার তারা পন্যের বিনিময় স্বর্ণ ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় । যার কারনে শীঘ্রই তাদের স্বর্ণ রিজার্ভ অন্য দেশকে ছাড়িয়ে যায় । ১৯৪৭ সালে বিশ্বের মোট মজুদকৃত স্বর্ণের প্রায় ৭০% তাদের হস্তগত হয় ।
যুদ্ধের মধ্যেই ১৯৪৪ সালে মিত্র পক্ষের ৪৪ দেশের প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হাম্পশ্যায়ার অঙ্গরাজ্যের ব্রেটন উডস নামক স্থানে মিলিত হয়ে এক ঘোষনার মাধ্যমে মার্কিন ডলার কে Commodity -Based Money হিসেবে গ্রহণ করে । যার ফলে মিত্র পক্ষের দেশগুলো তাদের রিজার্ভে থাকা স্বর্ণের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র হতে ডলার গ্রহণ করে । ইতিহাসে নতুন এ ব্যবস্থাকে বলা হয় ব্রেটন উডস ব্যবস্থা ( Bretton Woods System )।
যখন ১৯৬০ এর দশকে ইউরোপের দেশগুলো যুদ্ধের ধাক্কা সামলে উঠে নিজেদের কাছে থাকা ডলারের পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বর্ণ কিনতে শুরু করে ঠিক তখনই প্রেসিডেন্ট নিক্সন পৃথিবীর সকল দেশকে বোকা বানিয়ে মার্কিন ডলারকে Fiat Money( হুকমি মুদ্রা ) ঘোষনা করে ।
যার কারণে ডলারের সাথে এখন আর স্বর্ণের সম্পর্ক থাকলো না । ১৯৭১ সালে দেওয়া প্রেসিডেন্ট নিক্সনের এই ঘোষণাকে ইতিহাসে নিক্সন শক (Nixon Shock) নামে অবহিত করা হয় । নিক্সন শক কার্যকর হওয়ার পর বিশ্বের অন্যন্য মুদ্রার মতো ডলারও স্বর্ণ সম্পর্ক বিহীন কাগুজে মুদ্রায় পরিণত হয় ।
যার ফলে দেশগুলো চাইলেও ডলারের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের জমাকৃত স্বর্ণ ফিরিয়ে আনতে পারবেনা। কারণ ডলারের সাথে স্বর্ণের সম্পর্ক না থাকায় স্বর্ণের দাম বাজারের চাহিদার উপর নির্ভর হয়ে গেল।
মনে করুণ যারা সেই সময় ১০০ গ্রাম স্বর্ণের বিপরীতে ১০০ ডলার নিয়ে ছিল তারা এখন চাইলেও ১০০ ডলারের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমপরিমান স্বর্ণ উত্তোলন করতে পারবে না। স্বর্ণের বাজার হয়ে গেল অস্থিতিশীল । এই প্রতারণার ফলে যুক্তরাষ্ট্র বিপুল পরিমানের স্বর্ণের মালিক হয়ে গেল ।
এখন প্রশ্ন হলো নিক্সন শকের মতো এত বড় একটি প্রতারনার পরেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেন ডলার বিনিময় বন্ধ করে দিলেন না ? শুধু তাই নয় এত বড় একটি প্রতারণার ফলেও ১৯৭৩ সালে সৌদি আরব এবং ওপেকভুক্ত অন্যন্য দেশ শুধু মাত্র ডলারের বিনিময়ে তাদের তেল বিক্রি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চুক্তিবদ্ধ হয়।
যার কারণে ডলার স্বর্ণের ভিত্তি হারালেও আরেকটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হলো। কাগুজে ডলার পরিণত হলো পেট্রোডলারে (Petrodollar)। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক ডলার বিনিময় বন্ধ না করার উত্তরে তখন পর্যন্ত মার্কিন রাজনীতি ও অর্থনীতির স্থিতিশীলতার কথা বলা হলেও কন্সপিরেসি থিউরি মতে কারণটি ছিল অন্য জায়গায় । যা এখন আমাদের আলোচনার বিষয় ।
আরো পড়তে পারেন
৩. ডলার নিয়ে কন্সপিরেসি থিউরি
Conspiracy theory এর বাংলা অর্থ ষড়যন্ত্র তত্ত্ব । কন্সপিরেসি থিউরি বলতে মূলত কোন ঘটনার এমন ব্যাখ্যাকে বুঝায়, যা সুস্পষ্ঠ প্রমাণ ছাড়া কোন গঠনাকে গভীর ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করা হয় । কন্সপিরেসি থিউরি সমন্ধে আরো জানতে উইকিপিডিয়া ঘুরে আসতে পারেন ।
মার্কিন ডলার দেখেছেন নিশ্চই (যদিও আমি এখনো ডলার দেখিনি) ।
ডলারের গায়ে একটি অসমাপ্ত পিরামিডের ছবি রয়েছে যার নিচে ল্যাতিন ভাষায় লেখা রয়েছে NOVUS ORDO SECLORUM ইংরেজীতে New World Order বাংলায় যার মানে দাড়ায় নতুন পৃথিবীর আদেশ । অনেক বলে থাকে এটি আসলে সেক্যুলার ওয়ার্ল্ড অর্ডার বুঝায় ।
আরো পড়তে পারেন
Secular অর্থ ধর্মনিরপেক্ষতা বা ধর্মকে বাদ দিয়ে প্রমান দেখুন । এখন কথা হলো যেখানে বলা হলো সেক্যুলার ওয়ার্ল্ড অর্ডার অর্থ্যাৎ ধর্ম নিরপেক্ষ নতুন পৃথিবীর আদেশ। সেখানে কি করে আবার ঈশ্বরের কথা আসতে পারে। ডলারের মাঝ বরাবর উপরের দিকে রয়েছে IN GOD WE TRUST অর্থ্যাৎ আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করি ।
IN GOD WE TRUST |
এখন প্রশ্ন হলো এই ঈশ্বরটি আসলে কে? এর উত্তরটি কিন্তু পিরামিডটির উপরে ল্যাতিন ভাষায় রয়েছে । যেখানে বলা হয়েছে ANNUIT COEPTIS অর্থ্যাৎ আমেরিকা আধিগ্রহণে তিনি অনুমোদন দিয়েছেন ।
ANNUIT COEPTIS |
এখন যদি প্রশ্ন করা হয় এই "তিনি" টি কে । এর উত্তর কিন্তু লুকিয়ে আছে ANNUIT COEPTIS লেখাটির নিচে ত্রিভূজের মধ্যে থাকা এক চোখে ।
ঈশ্বর নিশ্চই এক চোখ বিশিষ্ট হতে পারেন না।
প্রিয় পাঠক কোন মানুষই ভুলের উর্ধ্বে নয় । তাই কোন ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ভুলগুলো সম্পর্কে জানাবেন । আপনার মতামত সম্মানের সাথে গ্রহণ করা হবে ।