কি হবে পৃথিবীর গতি হঠাৎ থেমে গেলে |
হায় বন্ধু,
অতীতে পৃথিবীর গতি কখনো থামেনি বলতে পারেন "একখান চাবি মাইরা দিছে ছাইরা জনম ভইরা চলতে আছে ।" ভবিষ্যতেও থামবে কি না আমি জানিনা । জানলে আপনারে জানই দিবো নে ।
তবে শুনে থাকবেন ২০০৪ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বিপের উপকূলে ৮থেকে ১০ মিনিট ধরে ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প সংঘটিত হয় । ( পৃথিবী থেমে গেলে কি হবে ? )
এই ভূমিকম্পের ফলে এক ভয়াবহ সুনামির সৃষ্টি হয় যাতে যাতে ১৪ টি দেশের প্রায় ৩ লক্ষ লোক নিহত হয় । এই ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবী তার কক্ষপথে ১ সেন্টিমিটারের মত নড়ে গিয়েছিল । তো চলুন কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
আমরা জানি পৃথিবীর দুই ধরণের গতি বিদ্যমান । পৃথিবী তার নিজের অক্ষের উপর ঘোরে যাকে আমরা বলি আহ্নিক গতি । এর বেগ বিষুব রেখা বরাবর ১৬৭৫ কিলোমিটার ঘন্টায় ।
আবার পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে যাকে আমরা বলি বার্ষিক গতি । এই বেগের মান সেকেন্ড ৩০ কিলোমিটার । বলে রাখা ভালো আহ্নিক গতির কারণে দিন-রাত এবং বার্ষিক গতির কারণে ঋতু পরিবর্তন হয় । ( পৃথিবী থেমে গেলে কি হবে ? )
এখন প্রশ্ন হলো যদি পৃথিবীর এই দুই ধরণের গতির কোন একটি থেমে যায় তাহলে কী হবে ? এই নিয়েই আজকের আয়োজন।
আরো পড়তে পারেন
কি হবে পৃথিবীর আহ্নিক গতি থেমে গেলে ?
কি হবে পৃথিবীর আহ্নিক গতি থেমে গেলে ? ছবি: Wikimedia Commons |
১. কি ভাবছেন ? পৃথিবী থেমে গেলে আপনি অফিসে না গিয়ে বসে বসে দেখবেন পৃথিবী থেমে গেলে কী হয় ? কারণ এ রকম সুযোগ তো জীবনে সবসময় আসে না । তাই না ? আরে ভাই সে সুযোগ নেই কারণ তার আগেই পৃথিবীর পৃষ্ঠে থাকা সব কিছু সহ আপনি "উড়াল দেবেন আকাশে" । ( পৃথিবী থেমে গেলে কি হবে ? )
নিউটনের গতি বিষয়ক ১ম সূত্রে বলা হয়েছে "বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু স্থির থাকবে, সমবেগে চলতে থাকা বস্তু সমবেগে চলতে থাকবে।" যাকে বস্তুর জড়তা বলে । তো সূত্রে বর্ণিত গতি জড়াতার কারণেই পৃথিবী থেমে গেল পৃথিবী পৃষ্ঠের সবকিছু একেবারে হিমালয় পর্বত থেকে শুরু করে আসমানির ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘর সহ সব কিছু "উড়াল দেবে আকাশে" ।
এই উড়ালের বেগ পশ্চিম দিকে ঘন্টায় প্রায় ১০০০ কিমি হবে । আমরা জানি, পৃথিবী পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে ঘুরে অর্থ্যাৎ ঘড়ির কাটার উল্টো দিকে । তাই আপনার উড়াল হবে পশ্চিম দিকে । ( পৃথিবী থেমে গেলে কি হবে ? )
পৃথিবী পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে ঘুরে । |
বলে রাখা ভাল আপনার উড়ালের স্পিড হবে পিস্তল থেকে বুলেট বের হওয়ার সম পরিমান । এর ফলে মূহুর্তেই আপনার শরীরের হাড় থেকে মাংস শিরা উপশিরা আলাদা হয়ে যাবে । রক্ত গুলো নিচে না পড়ে আপনার সাথেই উড়তে থাকবে ।
পবিত্র কোরআনের সূরা আল যিলযালের প্রথম দুই আয়াতে ব্যপারটিকে এভাবে বলা হয়েছে, ইজা যুলযিলাতিল আরদু যিলযালাহা ০ ওয়াখরজাতিল আরদু আসকলাহা অর্থ্যাৎ যখন পৃথিবীকে ভীষণ ভাবে কম্পিত করা হবে । এবং পৃথিবী নিজের পৃষ্ঠে থাকা সমস্ত বোঝা বাইরে নিক্ষেপ করে দিবে । ( পৃথিবী থেমে গেলে কি হবে ? )
আরো পড়তে পারেন
২. কি ভাবছেন পৃথিবী পৃষ্ঠে থেকে যেহেতু রক্ষা নেই তাই পৃথিবী থেমে যাওয়ার পূর্বাভাস শুনেই (যদিও ভূমিকম্পের মতো পৃথিবী থেমে যাওয়ার পূর্বাভাস করা সম্ভব নয়) আপনি গিয়ে চড়বেন বিমানে।
বিমানে চড়ার ফলে আপনি দুই এক সেকেন্ডে জন্য রক্ষা পেলেও হঠাৎ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনিও গোটা বিমান সহ নিশ্চহ্ন হয়ে যাবেন । পৃথিবী থেমে যাওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পৃথিবীর আকাশে শুরু হবে ভয়ানক ঝড় এবং প্রচন্ড বজ্রপাত । ফলে মারাত্বক বিদ্যুতায়নের মধ্যে পড়ে মূহুর্তে পৃথিবীর আকাশে থাকা বিমানগুলো উধাও হয়ে যাবে।
৩. যাই হোক, এখন আপনি ভাবতে পারেন যেহেতু মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর আহ্নিক গতি শূন্য তাই হয়তো সেখানে রক্ষা পাওয়া যাবে । তো চলুন মেরু অঞ্চলে রক্ষা পাওয়া যাবে কিনা তার সম্ভাবনা দেখে আসি । ( পৃথিবী থেমে গেলে কি হবে ? )
১৬৭৫ কিলোমিটার বেগে চলতে থাকা পৃথিবী হঠাৎ থেমে গেলে পারমানুবিক বোমা বিষ্ফোরণের শক ওয়েবের মতো হঠাৎ প্রচন্ড ধাক্কার বাতাস সৃষ্টি হবে । যার ফলে মেরু অঞ্চলে থাকা বসবাসকারীরা মূহুর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে ।
৪. পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর ঘোরার সময় তৈরি হয় অপকেন্দ্র বল (Centrifugal force) যার ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রের তরল জলের উপস্থিতি বেশী । হঠাৎ পৃথিবীর আহ্নিক গতি বন্ধ হলে নিরক্ষীয় অঞ্চলের সমুদ্রের জল প্রচন্ড সুনামির সাথে দুই মেরুর দিকে চলে যাবে।
ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে তৈরি হবে বিশাল ভূভাগ আর দুই মেরুতে তৈরি হবে ৭টি মহাসাগরের সমান দুটি মেগাসাগর । আমরা আগেই বলেছি ২০০৪ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরে ভূমি কম্পের ফলে তৈরি হয়েছিল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সুনামি সেখানে পৃথিবীর থেমে যাওয়ার ফলে তৈরি হওয়া সুনামির শক্তি সম্পর্কে নিশ্চই আন্দাজ করতে পারছেন ! ( পৃথিবী থেমে গেলে কি হবে ? )
৫. আমরা জানি পৃথিবী একটি বিশাল চৌম্বক ক্ষেত্র । উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু হলো এই চুম্বকের দুই মেরু। পৃথিবীর প্রচন্ড ঘূর্ণন বেগের কারণেই পৃথিবীর বাহিরে এই শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ফিল্ডের সৃষ্টি হয়েছে ।
আরো পড়তে পারেন
পৃথিবীর এই ম্যাগনেটিক ফিল্ডের কারনেই সূর্য ও অন্যান্য তারকা থেকে আসা সোলার রেডিয়েশন পৃথিবীতে আসতে পারে না । পৃথিবী হঠাৎ থেমে গেলে পৃথিবীর কেন্দ্রে থাকা ধাতব কোরটি ধ্বংস হয়ে পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড ধ্বংস হয়ে যাবে ।
ফলে সৌর রেডিয়েশন পৃথিবীর একটি অংশকে ভস্মীভূত করে ফেলবে । তবে এই রেডিয়েশন পৃথিবীর সকল অংশকে ভস্মীভূত করতে পারবে না । কারণ পৃথিবীর গতি থেমে যাওয়ার ফলে পৃথিবীর একটি অংশ তখন সূর্যে থেকে আড়ালে থাকবে।
৬. এত কিছুর পরেও যদি আপনি বেঁচে থাকেন এবং মনে মনে ভাবেন সৌর রেডিয়েশন থেকে বাঁচার জন্য আপনি পৃথিবীর যে অংশটি সূর্যের আড়ালে আছে সেখানে চলে যাবেন তাহলে আপনার জ্ঞাতার্থে বলে রাখি পৃথিবীর একটি অংশ জ্বলে পুড়ে ছাই হলেও অন্য অংশটি তখন প্রচন্ড ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হবে । ঠান্ডা এতটাই বৃদ্ধি পাবে যে ব্যাকটেরিয়া পর্যন্ত জীবিত থাকবেনা । ( পৃথিবী থেমে গেলে কি হবে ? )
৭. এখন একটা মজার তথ্য দিয়ে রাখি মহাকাশ থেকে রকেট যখন পৃথিবীতে ফিরে আসে তখন বাতাসের ঘর্ষণের কারণে তার মধ্যে আগুন লেগে যাওয়ার পরিস্থিতি তেরি হয় । তো পৃথিবী থেমে যাওয়ার ফলে বাতাস যখন ১৭০০ কিমি বেগে বইতে শুরু করবে তখন পৃথিবীর পুরো স্থল এবং জলভাগে আগুন লেগে যাবে ।
পানিতে থাকা হাইড্রোজেন নিজে জ্বলবে আর অক্সিজেন আগুন জ্বালাতে সাহায্য করবে। পবিত্র কোরআনের সূরা আত-তাকবীরের ৬ নাম্বার আয়াতে ব্যাপারটিকে এভাবে বলা হয়েছে: ও ইজাল বিহারু চুজজিরাত অর্থ্যাৎ এবং সমুদ্র যখন প্রজ্জ্বলিত করা হবে ।
তথ্যসূত্র ১ এবং তথ্যসূত্র ২
কি হবে পৃথিবীর বার্ষিক গতি থেমে গেলে ?
কি হবে পৃথিবীর বার্ষিক গতি থেমে গেলে ? ছবি: Wikimedia Commons |
সাধারণভাবে হঠাৎ করে কোন মহা শক্তিশালী সত্ত্বার হস্তক্ষেপ ছাড়া পৃথিবীর গতি থেমে যাবে না বিজ্ঞানীদের ভাষ্য এমনটাই। স্বাভাবিক ভাবে পৃথিবীর গতি থামবে তবে সেটা খুবই ধীরে হঠাৎ করে নয়।