পৃথিবীর বয়স কত ? কীভাবে নির্ণয় করা হলো পৃথিবীর বয়স

মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে অসংখ্য তত্ত্বের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত তত্ত্ব হলো বিগ ব্যাং তত্ত্ব । ১৬৮৭ সালে আইজেক নিউটন তার বিখ্যাত মহাকর্ষীয় সূত্রে বলেন মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা একে অপরকে নিজেদের দিকে আকর্ষণ করে । সূত্রমতে আকর্ষণ বলের কারণে বস্তুগুলো একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে এসে মিলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা । কিন্তু বাস্তবে তেমনটি ঘটে না । ১৯০৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রদানের মাধ্যমে নিউটনের মহাকর্ষীয় সূত্রের এই সীমাবদ্ধতা দূর করেন ।

পৃথিবীর বয়স কত
পৃথিবীর বয়স কত

আইনস্টাইন আপেক্ষিক তত্ত্বের মাধ্যমে এটি পরিষ্কার করেন যে আকর্ষণ বলের কারণে বস্তুগুলো একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে এসে মিলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যেত যদি না কি স্থান এবং কাল পরম হতো । তার মতে স্থান, কাল পরম না হওয়ার কারণে এমনটি ঘটে না ।

আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের সূত্র ধরে রাশিয়ান পদার্থ বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্রিদম্যান সর্ব প্রথম দাবী করেন যে, এই মহাবিশ্ব স্থির নয় বরং এটি সম্প্রসারণশীল । কিন্তু তখনকার সময়ে তার কথার যথেষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় এটি বিজ্ঞান মহলে প্রতিষ্ঠিত হয় নি । এরপর ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে বেলজিয়ামের পদার্থ বিজ্ঞানী জর্জ লেমিটর রাশিয়ান বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্রিদম্যান এর সাথে সুর মিলিয়ে সে একই কথা পুনরাবৃত্তি করেন ।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই মহাবিশ্ব স্থির নয় এটি বরং সম্প্রসারণশীল কথাটির ভিত্তি আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব হলেও খোদ আইনস্টাইন তা মেনে নিতে পারেন নি ।

আরো পড়তে পারেন

কিন্তু ১৯২০ সালে বিজ্ঞানী হাবল তার আবিষ্কৃত টেলিস্কোপের সাহায্যে Doppler Effect থিউরির মাধ্যমে প্রমাণ করেন মহাবিশ্ব স্থির নয় সত্যি সত্যি এটি সম্প্রসারণশীল ।

হাবলের এই পর্যবেক্ষণ থেকে ধারণা করা হয় ১০ - ১৫ বিলিয়ন বছর আগে আমাদের এই মহাবিশ্ব অতি ক্ষুদ্রাকার ভরসম্পন্ন অতি উত্তপ্ত বিন্দুতে পুঞ্জীভূত ছিল । বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় সিঙ্গুলারিটি (Singularity) । 


বিগ ব্যাং
ধারণা করা হয় মহাবিষ্ফোরনের মাধ্যমে জন্ম হয় মহাবিশ্বের

এর পর সেকেন্ডের ব্যবধানে ঘটল মহাবিস্ফোরণ । বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় বিগ ব্যাং । ধারণা করা হয় মহাবিষ্ফোরনের মাধ্যমে জন্ম হয় মহাবিশ্বের । মহাবিষ্ফোরণের পথ ধরে বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে জন্ম নেয় আমাদের নীল গ্রহ পৃথিবীর । এখন প্রশ্ন হলো আমাদের পৃথিবীর বয়স কত? 

পৃথিবীর বয়স কত

পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫৪ ± ৫ কোটি বছর । পৃথিবী তৈরি হওয়ার পর পরই আজকের মতো  দেখতে ছিল না । এটি একেক সময় একেক রূপে ছিল । বিভিন্ন পরিবর্তন, পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে পৃথিবী আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছেছে । একটি মানুষের যেমন শিশুকাল, কিশোর কাল, যুবক কাল, বৃদ্ধকাল ইত্যাদি রয়েছে তেমনি ভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন কালে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা পৃথিবীকে বিভিন্ন যুগ বিভাজনে বিভাজিত করেছেন ।

আজ থেকে ঠিক ৫ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী আজকের আকৃতির ছিল না । তখন সূর্য এবং নতুন সৃষ্ট তারাগুলো ধূলো দিয়ে আবৃত ছিল । সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে মহাকর্ষ বলের প্রভাবে ধূলোগুলো যুক্ত হয়ে ছোট ছোট পাথর হিসেবে তৈরি হয় । মিলিয়ন বছর ধরে মহাকর্ষের আকর্ষণে আটকে যাওয়া বস্তুগুলোর প্রচণ্ড ঘূর্ণনের ফলে পৃথিবীর গোল-আকৃতি সৃষ্টি হয়। প্রায় ৫ মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ২০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়ে বেশি ছিল । তখন ছিল শুধু কার্বন ডাই - অক্সাইড, নাইট্রোজেন, এবং জলীয় বাষ্প ।

প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে অপর একটি গ্রহ থেইয়ার সংঘর্ষে জন্ম হয় পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদের। 

চাঁদের জন্ম
প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে অপর একটি গ্রহ থেইয়ার সংঘর্ষে জন্ম হয় চাঁদ

এর কিছু কাল পরেই পৃথিবীতে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে প্রচন্ড উল্কাপাত হয় । ধারণা করা হয় এই উল্কাপাতের কারণেই পৃথিবীতে পানির আবির্ভাব ঘটে । যদিও এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়ছে ।  পৃথিবীর জন্মের প্রায় ১.২ বিলিয়ন বছর পর হঠাৎ করেই পানির নিচের ভূ-পৃষ্ঠ কেঁপে ওঠে এবং আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটে। আগ্নেয়গিরির লাভা পুরো সমুদ্রে ছড়িয়ে গিয়ে আগ্নেয় দ্বীপ সৃষ্টি হয়। এই আগ্নেয় দ্বীপ পরে সংযুক্ত হয়ে পৃথিবীর প্রথম মহাদেশ গঠিত হয়। অতঃপর পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে ।  কীভাবে নির্ণয় করা হলো পৃথিবীর বয়স ?

পৃথিবীর বয়স নির্ধারণের প্রক্রিয়া

তেজস্ক্রিয় মৌলের একটি বৈশিষ্ট্য হলো তেজস্ক্রিয় রশ্মির নির্গত হওয়া । যাকে বলে তেজস্ক্রিয় ক্ষয় । তেজস্ক্রিয় মৌল তেজস্ক্রিয়তা ক্ষয় করে সম্পূর্ণ অন্য মৌলে পরিণত হয় । যেমন : ইউরোনিয়াম তেজস্ক্রিয়তা ক্ষয়  করে সীসায় পরিণত হয় । একেক তেজস্ক্রিয় মৌলের এই তেজস্ক্রিয়তা ক্ষয়ের হার একেক রকম । তবে প্রতিটি তেজস্ক্রিয় মৌলের তেজস্ক্রিয়তা ক্ষয়ের হার নির্দিষ্ট ।

তেজস্ক্রিয়তা ক্ষয়ের হিসেব করা হয় একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থের অর্ধেকটা ক্ষয় হতে কত সময় লাগে তার ভিত্তিতে । যাকে বলা হয় অর্ধায়ু । প্রতি সেকেন্ডে একটি তেজস্ক্রিয় মৌলের কী পরিমাণ তেজস্ক্রিয়তা ক্ষয় হয় তার ভিত্তিতে সমীকরণ করে কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের অর্ধায়ু হিসেব করা হয় । যেমন : ইউরোনিয়াম এর অর্ধায়ু ৪৫০ কোটি বছর । অর্থ্যাৎ ১০০ টি পরমানুর একটি ইউরোনিয়াম খন্ড হতে ৫০ টি সীসায় পরিণত হতে ৪৫০ কোটি বছর লাগে।

তেজস্ক্রিয় মৌলের অর্ধায়ু

পৃথিবীতে প্রাপ্ত ইউরেনিয়ামের শীলাখন্ড পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে সবগুলোতেই একটি মিল রয়েছে আর তা হলো এদের অর্ধেক সীসা আর অর্ধেক ইউরেনিয়াম । তার মানে পৃথিবীর সকল ইউরেনিয়ামগুলো এখন অর্ধায়ুতে অবস্থান করছে । অর্থ্যাৎ এগুলোর বয়স ৪৫০ কোটি বছর । তার মানে ৪৫০ কোটি বছর আগে এসব শীলা খন্ড সৃষ্টি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায় । এখন আমার যদি শীলাখন্ড সৃষ্টির সময়কে পৃথিবী সৃষ্টির সময় ধরে নেই তাহলে পৃথিবীর বয়স ও ৪৫০ কোটি বছর ।

ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিও । এছাড়াও আরো কোনো বিষয় জানার প্রয়োজন হলে আমাদের প্রশ্ন করতে পারো । আমার চেষ্টা করো শিঘ্রই তোমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করতে ।

আরো পড়তে পারেন

জুয়েল

আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। শিক্ষা সকলের অধিকার। আসুন আমরা প্রত্যেক শিশুর স্বপ্ন জয়ের সারথি হই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন