সাগু কি ? কেন খাবেন sabudana

sabudana বা সাগু আমাদের দেশে একটি পরিচিত নাম । সাধারণত বাচ্চাদের বা অসুস্থ মানুষদের sabudana খাওয়ানো হয় । আমাদের দেশে সাগু দিয়ে ফালুদা, পায়েস, হালুয়া ইত্যাদি তৈরি করা হয় ।  আশ্চর্য হলেও সত্যি যে,  ভাত যেমন আমাদের দেশের প্রধান খাবার তেমনি ভাবে পাপুয়া নিউগিনি, মলাস্কার মতো বিভিন্ন দেশে sabudana প্রধান খাবার ।

sabudana
sabudana

sabudana বা সাগু কি

সাগুকে ইংরেজীতে বলা হয় সাগু পার্ল । এটি এক প্রকারের পাম গাছ থেকে তৈরি হয় । যার বৈজ্ঞানিক নাম Metroxylon sagu । Metroxylon একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ গাছের নরম অন্তসার । সাগু এক প্রকারের স্টার্চ জাতীয় পদার্থ যা পাম জাতীয় এক প্রকারের গাছের ভিতরের নরম অংশ থেকে সংগ্রহ করা হয় । সাগু বা সাবুদানা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় সাকসাক, রাবিয়া নামে পরিচিত ।

সাবুদানা কিভাবে তৈরি হয়

Metroxylon sagu নামক এক প্রকারের পাম গাছ থেকে তৈরি হয় সাগু বা সাবু । সাগু পাওয়া যায় উক্ত পাম গাছের কান্ডের ভেতরে । ৭ থেকে ১৫ বছর বয়সে যখন সাগুগাছে ফুল ফোটার সময় হয় তখন এর কান্ডকে চিড়ে ভেতরের নরম তন্তুকে সংগ্রহ করা হয় । 

sabudana
sabudana - এর গাছ

এরপর সংগ্রহ করা নরম তন্তুকে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এর ভেতরের স্টার্চ পানির নিচে জমা হয় । জল থেকে আলাদা করে স্টার্চ গুলোকে শুকিয়ে নেওয়া হয় । যেগুলোকে বলা হয় সাবুদানার ময়দা। এই ময়দাকে মেশিনের সাহায্যে ছোট ছোট গোল আকৃতি দেওয়া হয় । একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে ১৪০ থেকে ৩৫০ কেজি সাবুদানা পাওয়া যায় ।

sabudana
sabudana গাছের ফুল

সাবুদানার গাছে একবারই ফুল ফোটে এবং ফল ধরার পর গাছ মরে যায় । একটি গাছ ১ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে । সাগুর বৃহত্তম জোগান আসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে ।

আরো পড়তে পারেন

সাবুদানার পুষ্টিগুণ

sabudana মূলত কার্বহাইড্রেট ( শর্করা ) জাতীয় খাদ্য । এতে অল্প পরিমানে প্রোটিন, চর্বি, আঁশ ( ফাইবার ) এবং ভিটামিন থাকে । U.S. DEPARTMENT OF AGRICULTURE এর ফুড চার্ট অনুযায়ী প্রতি ১০০ গ্রাম সাবুদানায় -

শক্তি358 kcal
পানি11 g
শর্করা88.7 g
প্রোটিন0.19 g
ফ্যাট0.02 g
তন্তু বা ফাইবার0.9 g
ক্যালসিয়াম ( Ca )20 mg
আয়রন ( Fe )1.58 mg
ম্যাগনেসিয়াম (Mg)1 mg
ফসফরাস ( P )7 mg
পটাসিয়াম ( K )11 mg
সোডিয়াম ( Na )1 mg
ভিটামিন B10.004 mg
ভিটামিন B50.135 mg
ভিটামিন B60.008 mg
সূত্র দেখুন এখানে

সাবুদানার উপকারিতা

আমরা আগেই বলেছি সাবুদানা কার্বহাইড্রেট ( শর্করা ) জাতীয় খাদ্য । এতে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান কম থাকে । তাই দেহের শক্তি জন্য sabudana উপকারী হলেও দেহের ক্ষয়পূরণ বা রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সাগুর কোনো ভূমিকা নেই ।

নিচে sabudana বা সাগুর উপকারিতা দেওয়া হলো :

সাবুদানা হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায় 

হার্টের রোগীদের জন্য  সাবুদানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাবার । সাবুতে এমিলস নামক এক ধরণের উচ্চমাত্রার শর্করা থাকে । amylose লিনিয়ার চেইনযুক্ত এক প্রকারের গ্লুকোজ যা হজম হতে বেশি সময় লাগে । যার কারণে তা রক্তের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা ঠিক রাখে ।

sabudana দেহের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে

সাবুদানায় প্রচুর পরিমাণে কার্বহাইড্রেট থাকে । যা আমাদের দেহের শক্তি জুগিয়ে দেহকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে । একটি গবেষণায় দেখা গেছে ব্যায়াম করার পর সাবুদানা গ্রাহণ করার কারণে অন্যান্য খাবারের তুলনায় শক্তি ৩৭% বৃদ্ধি পায় ।

সাগুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে

সাবুদানায় ট্যানিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে । অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষগুলিকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এগুলি ক্যান্সারের মতো কিছু প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে কারণ তাদের ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের দেহের ফ্রি রেডিকেল এর বিরুদ্ধে লড়াই করে । ফ্রি রেডিকেল ক্যান্সার, হার্টের রোগ সহ আমাদের দেহের বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী ।

সাবুতে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ থাকে

রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ হলো এক প্রকার শর্করা যা হজম প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় কিন্তু হজম হয় না । রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে আনে, ক্ষুধা হ্রাস করে এবং হজমের জন্য ভালো ।

sabudana হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

সাবুদানায় প্রচুর পরিমাণে জলে দ্রবনীয় আঁশ থাকে । যা দ্রুত হজম হয় । এছাড়াও এটি আমাদের পৌষ্টিক নালী পরিস্কার রাখে ।

সাবুদানা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে

যাদের কোষ্ঠ্যকাঠিন্য রয়েছে অর্থ্যাৎ মল ত্যাগে সমস্যা হয় তাদের জন্য সাবুদানা খুবই উপকারী । নিয়মিত sabudana খেলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর হয় ।

সাবুদানা খেলে কি মোটা হয়

সাবুদানা শর্করা জাতীয় খাদ্য । এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালোরি । তাই নিয়মিত এটি খেলে দেহের ওজন বৃদ্ধি পাবে ।

sabudana - এর অপকারিতা

চাল, গম, ওটস এর তুলনায় সাবুদানায় ভিটামিন, প্রোটিন ও খনিজ পদার্থের পরিমান খুবই কম থাকে ।তাই উক্ত খাদ্য শস্যগুলোর পরিবর্তে সাবুদানা খাওয়া উচিত নয় । তবে সাবুদানা খেলে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না । যারা জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত তারা sabudana খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করে খাবেন ।

ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিও । এছাড়াও আরো কোনো বিষয় জানার প্রয়োজন হলে আমাদের প্রশ্ন করতে পারো । আমার চেষ্টা করো শিঘ্রই তোমাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করতে ।

আরো পড়তে পারেন

জুয়েল

আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। শিক্ষা সকলের অধিকার। আসুন আমরা প্রত্যেক শিশুর স্বপ্ন জয়ের সারথি হই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন