জেনে নিন সমাস চেনার সহজ উপায়

সমাস বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সমাস একটি জটিল বিষয় হলেও এ আর্টিকেলের মাধ্যমে সমাস চেনার সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। সমাস সমন্ধে ভালো করে দক্ষতা অর্জন করার জন্য আর্টিকেলটি কয়েক বার পড়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। আশা করি সমাস চেনার সহজ উপায় আর্টিকেলটি আপনাকে সমাস নির্ণয় সম্পর্কে দক্ষ করে তুলবে।

সমাস চেনার সহজ উপায়
সমাস চেনার সহজ উপায়

সমাস কাকে বলে

সমাস শব্দের অর্থ সংক্ষেপণ করা। অর্থসম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়াকে সমাস বলে। 

যেমন:মৌ সংগ্রহ করে যে মাছি = মৌমাছি। সমাসে যে বাক্যটিকে সংক্ষেপণ করা হয় সেই বাক্যটিকে বলা হয় ব্যাসবাক্য। যেমন: উপরের উদাহরণে মৌ সংগ্রহ করে যে মাছি বাক্যটি হলো ব্যাসবাক্য। আবার সমাসের সংক্ষিপ্ত বাক্যটিকে বলা হয় সমাসবদ্ধ বাক্য। যেমন: উপরের উদাহরণে মৌমাছি শব্দটি হলো সমাসবদ্ধ বাক্য।

সমাস বদ্ধ বাক্যের দুটি অংশ। এর মধ্যে প্রথম অংশটিকে বলা হয় পূর্বপদ। যেমন: মৌমাছি শব্দটির মৌ হলো পূর্বপদ। আর দ্বিতীয় অংশটিকে বলা হয় পরপদ। যেমন: মৌমাছি শব্দটির মাছি শব্দটি হলো পরপদ

সাধারণত তিনটি প্রক্রিয়ায় সমাস করা হয়। এগুলো হলো সংক্ষেপণ, একপদীকরণ, পদের মিলন।

সমাস প্রধানত ছয় প্রকার। যথা: ১.দ্বন্ধ সমাস, ২.কর্মধারয় সমাস, ৩.তৎপুরুষ সমাস, ৪.দ্বিগু সমাস, ৫.অব্যয়ীভাব এবং ৬.বহুব্রীহি সমাস। সমাসের এই প্রধান ছয় প্রকার ছাড়াও আরো কয়েকটি অপ্রধান সমাস রয়েছে। যেমন:প্রাদি সমাস, নিত্য সমাস ইত্যাদি।

সমাস চেনার সহজ উপায়

বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করুণ:

১. দুটি ধাপে সহজ উপায়ে সমাস নির্ণয় করতে হয়। এর মধ্যে প্রথম ধাপে সমাসের প্রধান প্রকারগুলো ( দ্বন্ধ সমাস, কর্মধারয় সমাস, তৎপুরুষ সমাস, বহুব্রীহি সমাস, দ্বিগু সমাস এবং অব্যয়ীভাব সমাস ) নির্ণয় করা হয়। আর দ্বিতীয় ধাপে প্রধান প্রকারগুলোর শ্রেণি বিন্যাস ( যেমন: কর্মধারয় সমাসের শ্রেণিবিন্যাস হলো মধ্যপদলোপী, উপমান, উপমিত ও রূপক) নির্ণয় করতে হবে।

যেমন: কাজলকাল →কর্মধারয় সমাস→উপমান কর্মধারয়।

এখনে কাজলকাল শব্দটির প্রথমধাপে সমাস নির্ণয় করা হলো কর্মধারয় আর দ্বিতীয় ধাপে হলো কর্মধারয় সমাসের শ্রেণি বিন্যাস হলো উপমান কর্মধারয়।

২. সমাস চেনার জন্য সমাসবদ্ধ পদগুলো প্রাধান্য গুরুত্বপূর্ণ।

৩. সমাস চেনার জন্য নিজের কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের কল্পনায় সমাসবদ্ধ পদের যে পদ প্রধান হবে তার উপর ভিত্তি করে সমাস নির্ণয় করতে হয়।

সমাসের নাম সমাস হওয়ার শর্ত উদাহরণ
দ্বন্ধ সমাস উভয় পদের অর্থ প্রাধান্য পায় মা-বাবা
কর্মধারয় সমাস  ১. পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়
২. অধিকাংশ ক্ষেত্রে তুলনা বুঝায়
কাজলকাল, সিংহাসন
তৎপুরুষ সমাস ১. পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়
২. ব্যাসবাক্যে বিভক্তি থাকে
বিলাত ফেরত, মনগড়া
দ্বিগু সমাস ১. পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়
২. পূর্বপদে সংখ্যা থাকে
৩. ব্যাস বাক্যে বিভক্তি থাকে না।
ত্রিকাল, চৌরাস্তা
অব্যয়ীভাব সমাস পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পায় আমরণ, উপশহর
বহুব্রীহি সমাস ১. কোনো পদেরই অর্থের প্রাধান্য পাবে না।
২. নতুন অর্থ প্রদান করে।
চৌচালা, হাতেখড়ি
আরো পড়তে পারেন

দ্বন্ধ সমাস চেনার সহজ উপায়

১. দ্বন্ধ সমাসের উভয় পদ প্রধান হয়। যেমন: মা-বাবা

২. দ্বন্ধ সমাসের ব্যাস বাক্যে পূর্বপদ ও পরপদের সম্বন্ধ বোঝানোর জন্য ব্যাসবাক্যে এবং, ও, আর এই তিনটি অব্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন: পিতা ও মাতা→পিতামাতা

কর্মধারয় সমাস চেনার সহজ উপায়

১. কর্মধারয় সমাসে পরপদ প্রধান হবে।

২. বেশির ভাগ সময়ে কর্মধারয় সমাসে একটি পদের সাথে অন্য পদের তুলনা করা হয়। যার কারণে ব্যাসবাক্যে যিনি, তিনি, ন্যায়, রূপ ইত্যাদি শব্দগুলো থাকে।

যেমন: মহারাজ সমাসটি একটি কর্মধারয় সমাস কারণ মহারাজ শব্দটির পরপদ অর্থ্যাৎ রাজ এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। একই ভাবে কাজলকাল এর কাল, চাঁদমুখ এর মুখ, সিংহাসন এর আসন, তুষারশুভ্র এর শুভ্র পদগুলো প্রাধান্য পেয়েছে বিধায় এগুলো কর্মধারয় সমাস। 

কর্মধারয় সমাসের শ্রেণিবিন্যাস চেনার সহজ উপায়

প্রথম ধাপে সমাসটি কর্মধারয় সমাস হলে দ্বিতীয় ধাপে এটি কর্মধারয় সমাসের কোন শ্রেণির সেটি নির্ণয় করতে হয়। কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকার - উপমান কর্মধারয়, উপমিত কর্মধারয়, রূপক কর্মধারয় এবং মধ্যপদলোপী কর্মধারয়।

মনে করুণ, কাজলকাল একটি কর্মধারয় সমাস এখন বিবেচ্য বিষয় হলো কাজলকাল সমাসটি কর্মধারয় সমাসের কোন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত?

সমাসের নাম সমাস হওয়ার শর্ত উদাহরণ
উপমান কর্মধারয় দুটি বস্তুর তুলনা করা হয় যা সম্ভব কাজলকাল
উপমিত কর্মধারয় দুটি বস্তুর তুলনা করা হয় যা অসম্ভব সিংহপুরুষ
রূপক কর্মধারয় দুটি বস্তুর তুলনা করা হয় যা অসম্ভব, রূপক ও অদৃশ্য মনমাঝি
মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্যে মধ্যপদ লোপ ঘরে আশ্রিত জামাই→ঘরজামাই
সাধারণ কর্মধারয় পরপদের অর্থের প্রাধান্য গিন্নিমা

১. যদি দুটি বস্তুর তুলনা করা হয় যা সম্ভব তবে সেটি উপমান কর্মধারয়। যেমন: তুষারশুভ্র এখানে, শুভ্র শব্দটি তুষারের সাথে তুলনা করা হয়েছে যা সম্ভব। তাই এটি একটি উপমান কর্মধারয়। একইভাবে কাজলকাল, অরুণরাঙ্গা ইত্যাদি উপমান কর্মধারয় সমাস। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কর্মধারয় সমাস হওয়ার প্রধান শর্ত কিন্তু পরপদের অর্থ প্রাধান্য পাওয়া।

২. যদি দুটি বস্তুর তুলনা করা হয় যা অসম্ভব তবে সেটি উপমিত কর্মধারয়। যেমন: সিংহপুরুষ এখানে, পুরুষকে সিংহের সাথে তুলনা করা হয়েছে যা অসম্ভব। তাই এটি একটি উপমিত কর্মধারয়। একইভাবে চাঁদমুখ, ইত্যাদি উপমিত কর্মধারয়।

৩.  যদি দুটি বস্তুর তুলনা করা হয় যা অসম্ভব, রূপক ও অদৃশ্য তবে সেটি রূপক কর্মধারয়। যেমন: বিষাদসিন্ধু→বিষাদ রূপ সিন্ধু ( দুঃখের নদী ) কারণ দুঃখের কখনো নদী হতে পারেনা তাই এটি রূপক কর্মধারয়। একইভাবে ক্রোধানল, মনমাঝি ইত্যাদি রূপক কর্মধারয়।

৪. যে কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্যে মধ্যপদ লোপ পায় সেগুলো মধ্যপদলোপী কর্মধারয়। যেমন: ঘরজামাই→ঘরে আশ্রিত জামাই। এখনে, ব্যাসবাক্যের মধ্যপদ আশ্রিত লোপ পেয়েছে তাই এটি মধ্যপদলোপী কর্মধারয়। একইভাবে সিংহাসন, সাহিত্যসভা, স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি মধ্যপদলোপী কর্মধারয়।

৫. মনে রাখতে হবে তুলনা না হয়েও শুধুমাত্র পরপদের অর্থপ্রাধান্য পেলেও সেটি কর্মধারয় সমাস হবে। {শর্ত প্রযোজ্য}

তৎপুরুষ সমাস চেনার সহজ উপায়

১. কর্মধারয় সমাসের মতো তৎপুরুষ সমাসেও পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। যেমন: বিপদাপন্ন 

তবে কর্মধারয় সমাসের সাথে তৎপুরুষ সমাসের প্রধান পার্থক্য হলো তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদ হতে বিভক্তি লোপ পায়। কিন্তু কর্মধারয় সমাসে কোনো বিভক্তি থাকে না।

বিভিন্ন রকম বিভক্তির সাথে পরিচয় না থাকলে কারক ও বিভক্তি নির্ণয়ের সহজ কৌশল আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন।

তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণিবিন্যাস চেনার সহজ উপায়

প্রথম ধাপে সমাসটি তৎপুরুষ সমাস হলে দ্বিতীয় ধাপে এটি তৎপুরুষ সমাসের কোন প্রকার সেটি নির্ণয় করতে হয়। তৎপুরুষ সমাস কয়েক প্রকার - দ্বিতীয়া তৎপুরুষ, তৃতীয়া তৎপুরুষ, চতুর্থী তৎপুরুষ, পঞ্চমী তৎপুরুষ, ষষ্ঠী তৎপুরুষ, সপ্তমী তৎপুরুষ, উপপদ তৎপুরুষ, অলুক তৎপুরুষ, নঞ্ তৎপুরুষ।

মনে করুণ, বিপদাপন্ন একটি তৎপুরুষ সমাস এখন বিবেচ্য বিষয় হলো বিপদাপন্ন সমাসটি তৎপুরুষ সমাসের কোন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত?

সমাসের নাম সমাস হওয়ার শর্ত উদাহরণ
দ্বিতীয়া তৎপুরুষ পূর্বপদ হতে দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে, ব্যাপিয়া) লোপ পায় আমকে কুড়ানো→ আমকুড়ানো
তৃতীয়া তৎপুরুষ পূর্বপদ হতে তৃতীয়া বিভক্তি (দ্বারা, দিয়া কর্তৃক) লোপ পায় মন দিয়ে গড়া→মনগড়া
চতুর্থী তৎপুরুষ পূর্বপদ হতে চতুর্থী বিভক্তি (নিমিত্ত, দান, ভক্তি, জন্য) লোপ পায় বসতের নিমিত্তে বাড়ি→বসত বাড়ি
পঞ্চমী তৎপুরুষ পূর্বপদ হতে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে, চেয়ে) লোপ পায় বিলাত থেকে ফেরত→বিলাতফেরত
ষষ্ঠী তৎপুরুষ পূর্বপদ হতে ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর, দের) লোপ পায় চায়ের বাগান→চাবাগান
সপ্তমী তৎপুরুষ পূর্বপদ হতে সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে) লোপ পায় গাছে পাকা→গাছপাকা
অলুক তৎপুরুষ বিভক্তি লোপ পায় না সোনার বাংলা
উপপাদ তৎপুরুষ পরপদের ক্রিয়ামূলের সাথে কৃৎ প্রত্যয় (যা, যে) থাকে পকেট মারে যে→পকেটমার
নঞ্ তৎপুরুষ পূর্বপদে না বাচক অব্যয় (অ, আ, না, নি, বে) থাকে ন কাতর→অকাতর

১. পূর্বপদ হতে দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে, ব্যাপিয়া) লোপ পেলে যে সমাস হয় সেটি দ্বিতীয়া তৎপুরুষ। যেমন : দুঃখকে প্রাপ্ত→দুঃখপ্রপ্ত, আমকে কুড়ানো→আমকুড়ানো, চিরকাল ব্যাপীয়া সুখী→চিরসুখী

২. পূর্বপদ হতে তৃতীয়া বিভক্তি (দ্বারা, দিয়া কর্তৃক) লোপ পেলে যে সমাস হয় সেটি তৃতীয়া তৎপুরুষ। এছাড়াও পরপদে ঊন, হীন, শূন্য হলে সেটিও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: মন দিয়ে গড়া→মনগড়া, জ্ঞান দ্বারা শূন্য→জ্ঞানশূন্য

৩. পূর্বপদ হতে চতুর্থী বিভক্তি (নিমিত্ত, দান, ভক্তি, জন্য) লোপ পেলে যে সমাস হয় সেটি চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস। যেমন: বসতের নিমিত্তে বাড়ি→বসত বাড়ি, বিয়ের জন্য পাগল→বিয়েপাগলা

৪. পূর্বপদ হতে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে, চেয়ে) লোপ পেলে যে সমাস হয় সেটি পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস। যেমন: খাঁচা থেকে ছাড়া→খাঁচাছাড়া, বিলাত থেকে ফেরত→বিলাতফেরত

৫. পূর্বপদ হতে ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর, দের) লোপ পেলে যে সমাস হয় সেটি ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস। যেমন: চায়ের বাগান→চাবাগান, রাজারপুত্র→রাজপুত্র

৬. পূর্বপদ হতে সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে) লোপ পেলে যে সমাস হয় সেটি সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস। যেমন: গাছে পাকা→গাছপাকা, দিবায় নিদ্রা→দিবানিদ্রা। সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসে কখনো কখনো ব্যাসবাক্যের পরপদ সমাসবদ্ধ পদের পূর্বে আসে। যেমন: পূর্বে ভূত→ভূতপূর্ব

৭. অলুক অর্থ লোপ পায় না এমন । অর্থ্যাৎ যে তৎপুরুষ সমাসে বিভক্তি লোপ পায় না সেটি অলুক তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: সোনার বাংলা, মাটির মানুষ ইত্যাদি।

৮. যে তৎপুরুষ সমাসের ব্যাসবাক্যের পরপদের ক্রিয়ামূলের সাথে কৃৎ প্রত্যয় (যা, যে) থাকে তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, তৎপুরুষ সমাস হওয়ার প্রধান শর্ত কিন্তু পরপদের অর্থ প্রাধান্য পাওয়া এবং ব্যাসবাক্যে বিভক্তি থাকা। পকেট মারে যে→পকেটমার

৯. যে তৎপুরুষ সমাসের সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে না বাচক অব্যয় (অ, আ, না, নি, বে) বসে তাকে  নঞ্ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: ন কাতর→অকাতর। একইভাবে নাবালক, অচেনা, অচেনা,অজানা ইত্যাদি নঞ্ তৎপুরুষ সমাস।

দ্বিগু সমাস চেনার সহজ উপায়

১. দ্বিগু সমাসেও কর্মধারয় সমাস এবং তৎপুরুষ সমাসের মতো পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। তবে দ্বিগু সমাসের সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে সংখ্যা থাকে। এবং দ্বিগু সমাসের ব্যাসবাক্যে কোনো বিভক্তি থাকে না। অন্যদিকে কর্মধারয় সমাসে পূর্বপদে সংখ্যা থাকে না আবার তৎপুরুষ সমাসের ব্যাস বাক্যে বিভক্তি থাকে। যেমন: তিন কালের সমাহার→ত্রিকাল, চার রাস্তার সমাহার→চৌরাস্তা হলো দ্বিগু সমাসের উদাহরণ।

অব্যয়ীভাব সমাস চেনার সহজ উপায়

১. অব্যয়ীভাব সমাসে পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য পায়। যেমন: দুর্নীতি→শব্দটিতে নীতির অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে দুর(অভাব) এর অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে তাই এটি অব্যয়ীভাব সমাস। একই ভাবে উপজেলা, উপশহর, নিরুৎসাহ প্রতিবাদ, যথারীতি, আমরণ ইত্যাদি হলো অব্যয়ীভাব সমাস।

বহুব্রীহি সমাস  চেনার সহজ উপায়

১.বহুব্রীহি সমাসে কোনো পদেরই অর্থের প্রাধান্য থাকে না।

২. বহুব্রীহি সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনটিরই অর্থ না বুঝিয়ে নতুন অর্থ প্রদান করে। যেমন: চার→চাল যার চৌচালা এখনে আমরা চারটি চাল না বুঝে বরং চার চাল বিশিষ্ট ঘর বুঝে থাকি। একইভাবে মহান আত্মা যার→মহাত্মা, সহ উদর যার→সহোদর, নীল বসন যার→নীল বসনা, নদীমাতা যার→নদীমাতৃক ইত্যাদি বহুব্রীহি সমাস।

৩. ব্যাস বাক্যে যিনি বা যারা থাকবে।

 বহুব্রীহি সমাসের শ্রেণিবিন্যাস  চেনার সহজ উপায়

প্রথম ধাপে সমাসটি বহুব্রীহি সমাস হলে দ্বিতীয় ধাপে এটি বহুব্রীহি সমাসের কোন শ্রেণির সেটি নির্ণয় করতে হয়। বহুব্রীহি সমাস কয়েক প্রকার - ব্যতিহার বহুব্রীহি, সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি, অলুক বহুব্রীহি, নঞ্ বহুব্রীহি, প্রত্যায়ান্ত বহুব্রীহি, ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি, সমানাধিকরণ বহুব্রীহি, মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি, নিপাতন সিদ্ধ বহুব্রীহি।

মনে করুণ, চুলাচুলি একটি বহুব্রীহি সমাস এখন বিবেচ্য বিষয় হলো চুলাচুলি সমাসটি বহুব্রীহি সমাসের কোন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত?

সমাসের নাম সমাস হওয়ার শর্ত উদাহরণ
ব্যতিহার বহুব্রীহি দ্বিরুক্ত থাকে চুলাচুলি
সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি পূর্বপদে সংখ্যা থাকে, তবে মনে রাখতে হবে কোনো পদেরই অর্থের প্রাধান্য থাকে না চৌচালা
অলুক বহুব্রীহি পূর্বপদ বা পরপদ কোনো পরিবর্তন হয় না গায়ে হলুদ
নঞ্ বহুব্রীহি পূর্বপদে না বাচক অব্যয় (অ, আ, না, নি, বে) বসে নির্ভুল
প্রত্যায়ান্ত বহুব্রীহি পরপদে এ, আ,ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত থাকে একচোখা (চোখ+আ), নি-খরচে (খরচ+এ)
ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি পূর্বপদ ও পরপদের উভয় স্থানে বিশেষ্য পদ (নাম পদ) হয় আশীতে (দাঁতে) বিষ যার→আশীবিষ
সমানাধিকরণ বহুব্রীহি পূর্বপদে বিশেষণ (গুণবাচক পদ) ও পরপদে বিশেষ্য পদ (নাম পদ) হয় উচ্চশির
মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি ব্যাসবাক্যে মধ্যপদ লোপ পেয়ে সমাসবদ্ধপদ তৈরি হয় বিড়ালের মতো চোখ যে নারী→বিড়ালচোখী
 নিপাতন সিদ্ধ বহুব্রীহি কোনো নিয়মে তৈরি হয় না নরাকারের পশু যে→নরপশু

১. যে বহুব্রীহি সমাসের সমাসবদ্ধ পদে দ্বিরুক্ত থাকে তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি বলে। যেমন: কানাকানি, চুলাচুলি

২. যে বহুব্রীহি সমাসের সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে সংখ্যা থাকে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলে। তবে মনে রাখতে হবে দ্বিগু সমাসেও পূর্বপদে সংখ্যা থাকে তবে দ্বিগু সমাসে পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকলেও বহুব্রীহি সমাসে কোনো পদেরই অর্থের প্রাধান্য থাকে না। যেমন: চৌচালা।

৩. অলুক অর্থ লোপ পায় না এমন । অর্থ্যাৎ যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ বা পরপদ কোনো পরিবর্তন হয় না তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে। অলুক তৎপুরুষ সমাসে পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকলেও অলুক বহুব্রীহি সমাসের কোনো পদেরই অর্থের প্রাধান্য থাকে না। যেমন: গায়ে হলুদ

৪. যে বহুব্রীহি সমাসের সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদে না বাচক অব্যয় (অ, আ, না, নি, বে) বসে তাকে  নঞ্ বহুব্রীহি সমাস বলে। নঞ্ বহুব্রীহি এবং  নঞ্ তৎপুরুষ সমাসের প্রধান পার্থক্য হলো নঞ্ তৎপুরুষ সমাসে পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকলেও নঞ্ বহুব্রীহি সমাসের কোনো পদেরই অর্থের প্রাধান্য থাকে না। যেমন: নির্ভুল, নিরুপায়

৫. যে বহুব্রীহি সমাসের সমাসবদ্ধ পদের পরপদে এ, আ,ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত থাকে তাকে প্রত্যায়ান্ত বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: একচোখা (চোখ+আ), নি-খরচে (খরচ+এ), দোটানা (টান+ আ)

৬. যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ ও পরপদের উভয় স্থানে বিশেষ্য পদ (নাম পদ) হয় সেটিই ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস। যেমন: আশীতে (দাঁতে) বিষ যার→আশীবিষ

৭. যে বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদে বিশেষণ (গুণবাচক পদ) ও পরপদে বিশেষ্য পদ (নাম পদ) হয় সেটিই সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস। হত যার শ্রী→হতশ্রী, খোশ মেজাজ যার→খোশমেজাজ, উচ্চ যার শির→উচ্চশির

৮. যে বহুব্রীহি সমাসের ব্যাসবাক্যে মধ্যপদ লোপ পেয়ে সমাসবদ্ধপদ তৈরি হয় সেটিই মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস। যেমন: বিড়ালের মতো চোখ যে নারী→বিড়ালচোখী, হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে→হাতেখড়ি

৯. নিপাতন সিদ্ধ অর্থ হলো কোনো নিয়মের অধীনে নয় যা। অর্থ্যাৎ যে বহুব্রীহি সমাস কোনো নিয়মে তৈরি হয় নি তাকে নিপাতন সিদ্ধ বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: দুদিকে অপ যার→দ্বীপ, নরাকারের পশু যে→নরপশু, জীবিত থেকেও মৃত যে→জীবন্মৃত

আশা করি আর্টিকেলটির মাধ্যমে সমাস চেনার সহজ উপায় আপনাদের উপকারে আসবে। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিবে । আর কোনো প্রশ্ন জানার ইচ্ছা হলে আমাদেরকে প্রশ্ন করতে পারেন । আমরা চেষ্টা করবো যত দ্রুত সম্ভব আপনার প্রশ্নের উত্তর প্রদান করতে ।

আরো পড়তে পারেন

জুয়েল

আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। শিক্ষা সকলের অধিকার। আসুন আমরা প্রত্যেক শিশুর স্বপ্ন জয়ের সারথি হই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন