ভাষার ধর্মই হচ্ছে বদলে যাওয়া। এই পরিবর্তনের ফলে একদিকে ভাষা যেমন উন্নত হচ্ছে, অন্যদিকে সৃষ্টি হচ্ছে নানামাত্রিক সমস্যা। তাই বলে শুদ্ধ বাংলা না শিখে সেই অজ্ঞতাকে আধুনিকতা বলে চালিয়ে দেওয়া একটি অপরাধ। স্কুল কলেজের গতানুগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও আমরা শুদ্ধ বাংলা বলা ও লেখার যোগ্যতা অর্জন করতে পারছি না। ভুল বানানে লেখা সাইনবোর্ড, ব্যানার ফেস্টুন দেখে এখন আর কেউ অবাক হন বলে মনে হয় না।
প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম |
ব্লগ, ফেসবুক, নিউজপোর্টালসহ বিভিন্ন সাইটে যা খুশি লেখাটাই যেন রীতি হয়ে গেছে। এই সমস্যা থেকে বাংলা ভাষাকে রক্ষা করার জন্য বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রণীত হয়। যা জানা প্রত্যেকটি শিক্ষিত বাঙালির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই বিবেচনা বোধ থেকে নিচে বাংলা একাডেমি প্রণীত প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম উল্লেখ করা হলো। তাছাড়া অফলাইনে অনুশীলনের জন্য আর্টিকেলের নিচে প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম pdf দেওয়া হয়েছ।
প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম
তৎসম শব্দ
১. তৎসম শব্দ অর্থ্যাৎ
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃত শব্দের বানান যথাযথ ও অপরিবর্তিত থাকবে। কারণ এইসব
শব্দের বানান ও ব্যাকরণগত প্রকরণ ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট রয়েছে।
২. তবে যেসব তৎসম শব্দে
ই বা ঈ, উ বা ঊ উভয় শুদ্ধ সেইসব শব্দে কেবল ই বা উ এবং তার কার চিহ্ন ই-কার বা উ-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন: কিংবদন্তি, খঞ্জনি, চিৎকার, ধমনি, পঞ্জি, ধূলি, পদবি, ভঙ্গি,
সরণি, সূচিপত্র ইত্যাদি।
৩. রেফ - এরপর ব্যঞ্জনবর্ণের
দ্বিত্ব হবে না। যেমন: অর্চনা, অর্জন, অর্থ, অর্ধ, কর্দম, কর্তন, কর্ম, কার্য, গর্জন,
সূর্য ইত্যাদি।
৪. সন্ধির ক্ষেত্রে 'ঙ'
এর পরে ক, খ, গ, ঘ, থাকলে 'ঙ' এর স্থানে ( ং) লেখা
যাবে। যেমন: অহংকার, ভয়ংকর, সংগীত, সংঘটন ইত্যাদি। তবে অঙ্ক, অঙ্গ, আকাঙ্ক্ষা, গঙ্গা,
সঙ্গ, সঙ্গী, বঙ্গ, লঙ্ঘন প্রভৃতি সন্ধিবদ্ধ নয় বলে 'ঙ' এর স্থানে ( ং)
হবে না।
অ-তৎসম অর্থ্যাৎ তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র শব্দ
১. সকল অ-তৎসম অর্থ্যাৎ
তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং এদের কার চিহ্ন ই-কার, উ-কার
ব্যবহৃত হবে। এমনকি স্ত্রী-বাচক ও জাতিবাচক ইত্যাদি শব্দের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য
হবে। যেমন: গাড়ি, চুরি, দাড়ি, বাড়ি, বেশি, হিজরি, আরবি, ফারসি, শহিদ, ফরাসি, বাঙালি,
ইংরেজি, জাপানি, নানি, দাদি, মাসি, পিসি ইত্যাদি।
২. একইভাবে আলি প্রত্যয়যুক্ত
শব্দে ই-কার হবে। যেমন: খেয়ালি, বর্ণালি, মিতালি, সোনালি, হেঁয়ালি ইত্যাদি। তবে কোনো
স্ত্রীবাচক শব্দে ঈ-কার ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন: রানী, পরী, গাভী ইত্যাদি।
৩. সর্বনাম, বিশেষণ ও ক্রিয়া
বিশেষণ পদরূপে "কী" শব্দটি ঈ-কার দিয়ে লেখা হবে। যেমন: কী করছ? কী পড়ো? কী
খেলে? কী আর বলব? কী জানি? কী যে করি! তোমার কী? অন্যক্ষেত্রে অব্যয় পদরূপে ই-কার দিয়ে
"কি" শব্দটি লেখা হবে। যেমন: তুমিও কি যাবে? সে কি এসেছিল?
৪. পদাশ্রিত নির্দেশক টি-তে
ই-কার হবে। যেমন: ছেলেটি, লোকটি, বইটি।
ক্ষ
ক্ষীর, ক্ষুর, ও ক্ষেত
শব্দ খির, খুর ও খেত না লিখে সংস্কৃত মূল অনুসরণে ক্ষীর, ক্ষুর, ও ক্ষেত- ই লেখা
হবে। তবে অ-তৎসম শব্দ খুদ, খুদে, খুর, খেপা খিধে ইত্যাদি লেখা হবে।
মূর্ধন্য ণ, দন্ত্য ন
১. তৎসম শব্দের বানানে
ণ, ণ-য়ের নিয়ম ও শুদ্ধতা রক্ষা করতে হবে। এছাড়া তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, মিশ্র কোনো শব্দের
বানানে ণ-ত্ব বিধি রক্ষা করা হবে না। যেমন: অঘ্রান, ইরান, কান, কোরান, গুনতি, গোনা,
ঝরনা, ধরন, পরান, সোনা, হর্ন।
২. তৎসম শব্দে ট,
ঠ, ড, ঢ - এর পূর্বে যুক্ত নাসিক্য বর্ণ "ণ" হয়। যেমন: কণ্টক, লুণ্ঠন, প্রচণ্ড।
তবে অতৎসম শব্দের ক্ষেত্রে ট, ঠ, ড, ঢ - এর পূর্বে "ন" হয়।
শ, ষ, স
তৎসম শব্দে শ, ষ, স - এর
নিয়ম মানতে হবে। এছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে সংস্কৃতের ষ-ত্ব বিধি প্রযোজ্য হবে না। বিদেশী
মূল শব্দে শ, স-এর যে প্রতিবর্ণ বা ধ্বনি রয়েছে বাংলা বানানে তাই ব্যবহার করতে হবে।
যেমন: সাল, সন, হিসাব, শহর, শরবত, শামিয়ানা, শখ, মসলা, সাদা, পোশাক, বেহেশত, নাশতা
শয়তান শার্ট, স্মার্ট ইত্যাদি। তবে পুলিশ শব্দটি ব্যতিক্রমরূপে শ দিয়ে লেখা হবে। তৎসম
শব্দে "ট" বর্ণের পূর্বে ষ হয়। যেমন: বৃষ্টি, দুষ্ট, নিষ্ঠা, পৃষ্ঠ ইত্যাদি।
কিন্তু বিদেশী শব্দে এই ক্ষেত্রে "স" হবে। যেমন: স্টল, স্টাইল, স্টিমার,
স্টুডিও, স্টেশন, স্টোর ইত্যাদি।
আরবি - ফারসি
আরবি-ফারসি শব্দে সে, সিন,
সোয়াদ বর্ণগুলোর প্রতিবর্ণে "স" এবং "শিন" এর প্রতিবর্ণ
"শ" ব্যবহার হবে। যেমন: সালাম, তসলিম, ইসলাম, মুসলমান, সালাত, এশা, শাবান,
শাওয়াল, বেহেশত ইত্যাদি। এই ক্ষেত্রে স-এর পরিবর্তে "ছ" লেখার প্রবণতা
দেখা যায়, যা সঠিক নয়। তবে যেখানে বাংলায় বিদেশী শব্দের বানান সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে
"স" ছ - এর রূপ লাভ করেছে সেখানে "ছ" ব্যবহার করতে হবে। যেমন:
পছন্দ, ,মিছিল, মিছরি, তছনছ ইত্যাদি।
আরো পড়তে পারেন
ইংরেজি
ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে
আগত বিদেশী "s" বর্ণ এবং Sh, -Sion, -Tion প্রভৃতি বর্ণগুচ্ছের জন্য
"স" ব্যবহৃত হবে।
জ, য
বাংলায় প্রচলিত বিদেশী
শব্দ সাধারণভাবে বাংলা ভাষার ধ্বনিপদ্ধতি অনুযায়ী লিখতে হবে। যেমন: কাগজ, জাহাজ, হাজার,
বাজার, জেব্রা ইত্যাদি। কিন্তু ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত কয়েকটি বিশেষ শব্দে "যে",
"যাল", "যোয়াদ", "যোয়া" রয়েছে যার ধ্বনি ইংরেজি
"Z" এর মতো, সে ক্ষেত্রে উক্ত আরবি বর্ণগুলোর জন্য "য" ব্যবহৃত
হবে। যেমন: আযান, ওযু, কাযা, নামায, মুয়াযযিন, যোহর, রমযান ইত্যাদি।
এ, অ্যা
বাংলায় এ বা এ-কার দ্বারা
অবিকৃত এ এবং বিকৃত বা বাঁকা অ্যা এই উভয় উচ্চারণ বা ধ্বনি নিষ্পন্ন হয়। তৎসম
শব্দ ব্যাস, ব্যায়াম, ব্যাহত, ব্যাপ্ত, জ্যামিতি, ইত্যাদি শব্দের বানান অনুরূপ ভাবে
লেখার নিয়ম রয়েছে। অনুরূপ তৎসম এবং বিদেশী শব্দ ছাড়া অন্য সকল বানানে অবিকৃত-বিকৃত
নির্বিশেষে এ বা এ-কার হবে। যেমন: দেখে, দেখি, যেন, জেনো, কেন, কেননা, গেল, গেলে, গেছে।
বিদেশী শব্দ অবিকৃত উচ্চারণের
ক্ষেত্রে এ বা এ- কার ব্যবহৃত হবে। যেমন: এন্ড (end), নেট, বেড, শেড ইত্যাদি।
বিদেশী শব্দ বিকৃত বা বাঁকা
উচ্চারণে অ্যা বা অ্যা-কার ব্যবহৃত হবে। যেমন: অ্যান্ড (and), অ্যাবসার্ড, অ্যাসিড,
ক্যাসেট, ব্যাক, ম্যানেজার, হ্যাট ইত্যাদি।
তবে কিছু ভাব এবং বিশেষভাবে
দেশী শব্দ রয়েছে যার অ্যা-কারযুক্ত রূপ বহুল পরিচিত। যেমন: ব্যাং, চ্যাং, ল্যাঙ, ল্যাঠা
ইত্যাদি। এসব শব্দে অ্যা অপরিবর্তিত থাকবে।
ও
বাংলা অ-কারের উচ্চারণ
বহুক্ষেত্রে ও-কার হয়। এই উচ্চারণকে লিখিত রূপ দেওয়ার জন্য ক্রিয়াপদের বেশ কয়েকটি রূপের
এবং কিছু বিশেষণ ও অব্যয় পদের শেষে, কখনো আদিতে অনেকে যথেচ্ছা ভাবে ও-কার ব্যবহার করছেন।
যেমন: ছিলো, করলো, বলতো, কোরছ, ঘোলে, যেনোনা, কেনোনা ইত্যাদি ও-কার যুক্ত বানান লেখা
হচ্ছে। বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া অনুরূপ বানান ব্যবহার করা যাবে না। বিশেষ ক্ষেত্রের মধ্যে
রয়েছে এমন অনুজ্ঞাবাচক ক্রিয়াপদ এবং বিশেষণ ও অব্যয় পদ বা অন্য শব্দ যার শেষে ও-কার
যুক্ত না করলে অর্থ অনুধাবনে ভ্রান্তি বা বিলম্ব ঘটতে পারে। যেমন: ধরো, চড়ো, বলো, জেনো,
কেনো, করানো, খাওয়ানো, শেখানো, করাতো, মতো, ভালো, কালো, হলো ইত্যাদি।
ং, ঙ
তৎসম শব্দে ং এবং ঙ যেখানে যেমন ব্যবহার্য ও ব্যাকরণ সম্মত সেইভাবে ব্যবহার করতে হবে। এ-সম্পর্কে
পূর্বে কিছু নিয়মের কথা বলা হয়েছে। তদ্ভব, দেশী, বিদেশী মিশ্র শব্দের বানানের ক্ষেত্রে
ওই নিয়মের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে এই ক্ষেত্রে প্রত্যয় ও বিভক্তিহীন শব্দের শেষে সাধারণভাবে
অনুস্বার ( ং) ব্যবহার হবে। যেমন: রং, ঢং, পালং, গাং ইত্যাদি। তবে শব্দে অব্যয় বা বিভক্তি
যুক্ত হলে কিংবা পদের মধ্যে বা শেষে স্বরচিহ্ন থাকলে "ঙ" হবে। যেমন: বাঙালি,
ভাঙা, রঙিন ইত্যাদি। বাংলা ও বাংলাদেশ শব্দ দুটি ং দিয়ে লেখতে হবে।
রেফ ও দ্বিত্ব
তৎসম শব্দের মতো অতৎসম
শব্দেও রেফের পরে ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন: কর্জ, মর্দ, সর্দার ইত্যাদি।
বিসর্গ
শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে
না। যেমন: কার্যত, মূলত, প্রধানত, প্রয়াত, বস্তুত, ক্রমশ, প্রায়শ ইত্যাদি। পদমধ্যস্থ
বিসর্গ থাকবে। তবে অভিধান সিদ্ধ হলে পদমধ্যস্থ বিসর্গ বর্জনীয়। যেমন: দুস্থ, নিস্পৃহ
ইত্যাদি।
আনো প্রত্যয়ান্ত শব্দ
আনো প্রত্যায়ন্ত শব্দের
শেষে ও-কার যুক্ত করা হবে। যেমন: করানো, বলানো, খাওয়ানো, পাঠানো, নামানো, শোয়ানো ইত্যাদি।
বিদেশী শব্দ ও যুক্তবর্ণ
বাংলায় বিদেশী শব্দের বানানে
যুক্তবর্ণকে বিশ্লিষ্ট করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যুক্তবর্ণের সুবিধা হচ্ছে তা উচ্চারণে
দ্বিধা দূর করে। তাই ব্যাপক ভাবে বিদেশী শব্দের বানানে যুক্তবর্ণ বিশ্লিষ্ট করা অর্থ্যাৎ
ভেঙে দেওয়া উচিত নয়। শব্দের আদিতে তো অনুরূপ বিশ্লেষ সম্ভবই নয়। যেমন: স্টেশন, প্রিন্ট
ইত্যাদি। তবে কিছু কিছু বিশ্লেষ করা যায়। যেমন: সেপটেম্বর, অকটোবর, মাকর্স, শেকসপিয়র,
ইসরাফিল ইত্যাদি।
হস্ - চিহ্ন
হস্-চিহ্ন যথাসম্ভব বর্জন
করা উচিত। যেমন: কাত, মদ, চট, ফটফট, কলকল, ঝরঝর, তছনছ, জজ, টন, ইত্যাদি।
তবে যদি ভুল উচ্চারণের
আশঙ্কা থাকে তাহলে হস্-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন: উহ্, যাহ্
যদি অর্থের বিভ্রান্তির
আশঙ্কা থাকে তাহলেও তুচ্ছ অনুজ্ঞায় হস্-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন: কর্, ধর্,
মর্, বল্ ইত্যাদি।
উর্ধ্ব কমা
উর্ধ্ব কমা যথা সম্ভব বর্জন
করা হবে। যেমন: করল (=করিল), দু জন, চার শ, চাল (চাউল), আল ইত্যাদি।
বিবিধ
যুক্তবর্ণের রূপ
যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ যতদূর
সম্ভব স্বচ্ছ করতে হবে। তার জন্য কতগুলো স্বরচিহ্নকে বর্ণের নিচে বসাতে হবে। যেমন:
গু, রু, শু, দ্রু, রূ, ভ্রু, হ্র, ত্র।
তবে ক্ষ, জ্ঞ, ঞ্জ, ষ্ণ,
ভ্র, হ্ন এইসব পরিচিত যুক্তরূপ অপরিবর্তিত থাকবে। কেননা তা বিশ্লিষ্ট করলে উচ্চারণ
বিকৃতির সম্ভাবনা থাকে।
সমাসবদ্ধ পদ
সমাসবদ্ধ পদ একসঙ্গে লিখতে
হবে, মাঝখানে ফাঁক রাখা যাবে না। যেমন: সংবাদপত্র, অনাস্বদিতপূর্ব, পূর্বপরিচিত, রবিবার,
মঙ্গলবার, স্বভাবগতভাবে, লক্ষ্যভ্রষ্ট, বারবার, বিষাদমন্ডিত, সমস্যাপূর্ণ, অদৃষ্টপূর্ব,
দৃঢ়সঙ্কল্প, সংযতবাক, নেশাগ্রস্ত, পিতাপুত্র ইত্যাদি।
বিশেষ প্রয়োজনে সমাসবদ্ধ
পদটিকে এক বা একাধিক হাইফেন (-) দিয়ে দিয়ে যুক্ত করা যায়।যেমন: মা-বাবা, মা-মেয়ে, বেটা-বেটি,
বে-সামরিক, স্থল-জল-আকাশ-যুদ্ধ, কিছু-না-কিছু।
বিশেষণ পদ
বিশেষণ পদ সাধারণভাবে পরবর্তী
পদের সঙ্গে যুক্ত হবে না। যেমন: সুনীল আকাশ, স্তব্ধ মধ্যাহ্ন, সুগন্ধ ফুল, সুন্দরী মেয়ে
ইত্যাদি।
কিন্তু যদি সমাসবদ্ধ পদ
অন্য বিশেষ্য বা ক্রিয়াপদের গুণ বর্ণনা করে তাহলে স্বভাবতই সেই যুক্তপদ একসঙ্গে লিখতে
হবে। যেমন: কতদূর যাবে, একজন অতিথি, তিনহাজার টাকা, বেশিরভাগ ছেলে, শ্যামলা-বরন মেয়ে।
তবে কোথাও কোথাও সংখ্যাবাচক শব্দ একসঙ্গে লেখা যাবে। যেমন: দুজন
নঞর্থক অব্যয় পদ
নাই, নেই, না, নি এই নঞর্থক
অব্যয় পদগুলো শব্দের শেষে না হয়ে পৃথক থাকবে। যেমন: বলে নাই, পাব না, আমার ভয়
নেই ইত্যাদি।
তবে শব্দের পূর্বে নঞর্থক
উপসর্গ "না" উত্তরপদের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। যেমন: নারাজ, নাবালক, নাহক ইত্যাদি।
অর্থ পরিস্ফুট করার জন্য
কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে না- এর পর হাইফেন (-) ব্যবহার কার যাবে। যেমন: না-বলা
কথা, না-দেখা রাত ইত্যাদি।
উদ্ধৃতির ব্যবহার
উদ্ধৃতি মূলে যেমন আছে
ঠিক তেমনি লিখতে হবে। কোনো পুরাতন রচনায় যদি বানান বর্তমান নিয়মের অনুরূপ না হয়, উক্ত
রচনার বানানই যথাযথভাবে উদ্ধৃতি করতে হবে। যদি উদ্ধৃতি রচনায় বানানের ভুল বা মুদ্রণের
ত্রুটি থাকে, ভুল উদ্ধৃতিই উল্লেখ করে তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে শুদ্ধ বানানটির উল্লেখ করতে
হবে।
এক বা দুই উর্ধ্ব কমা দ্বারা
উদ্ধৃতি অংশকে চিহ্নিত করতে হবে। তবে উদ্ধৃতি অংশটি যদি ইনসেট করা হয় তাহলে উর্ধ্ব
কমা ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া কবিতা যদি মূল চরণ-বিন্যাস অনুযায়ী উদ্ধৃত
হয় এবং কবির নাম উল্লেখ থাকে সেক্ষেত্রেও উদ্ধৃতি চিহ্ন দেওয়ার দরকার নেই। উদ্ধৃত
রচনার কোনো অংশ যদি বাদ দেওয়া হয় তাহলে বাদ দেওয়ার স্থানে তিনটি বিন্দু (...) দ্বারা
চিহ্নিত করতে হবে। গোটা অনুচ্ছেদ, স্তবক বা একাধিক ছত্র বাদ দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে বাদ
দেওয়া স্থানে তিনটি তারকার দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে।
ণত্ব-বিধি সম্পর্কে দুই মত
অ-তৎসম যুক্তাক্ষরের বানানের
ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যগণ একমত হতে পারেন নি। একটি মতে বলা হয়েছে এসব শব্দের যুক্তাক্ষরে
ণ্ট, ণ্ঠ ণ্ড, ণ্ঢ হবে। যেমন: ঘণ্টা, লণ্ঠন, গুণ্ডা।
অন্যমতে বলা হয়েছে, এসব শব্দের যুক্তাক্ষরে ন্ট, ন্ঠ, ন্ড হবে।