ক্রিয়া বিশেষণ কাকে বলে এবং ক্রিয়া বিশেষণ চেনার উপায়

যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, বৈশিষ্ট্য, সংখ্যা, পরিমান ইত্যাদি বোঝায় তাকে বিশেষণ পদ বলে। বিশেষণের ইংরেজি adjective । বিশেষণ দুই প্রকার। যথা: ১. নাম বিশেষণ ২. ভাব বিশেষণ। যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম ছাড়া ভিন্ন পদকে বিশেষায়িত করে, তাকে ভাব বিশেষণ বলে। ভাবে বিশেষণ ৪  প্রকার। যার মধ্যে অন্যতম হলো ক্রিয়া বিশেষণ। ক্রিয়া বিশেষণ কে ইংরেজিতে adverb বলে। পদ সমন্ধে ধারাবাহিক আলোচনার আজকের বিষয় হলো ক্রিয়া বিশেষণ কাকে বলে এবং ক্রিয়া বিশেষণ চেনার উপায়

ক্রিয়া বিশেষণ কাকে বলে
ক্রিয়া বিশেষণ কাকে বলে

ক্রিয়া বিশেষণ কাকে বলে

যে পদ বিশেষণ পদ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। অর্থাৎ ক্রিয়াবিশেষণ (adverb) বাকোর ক্রিয়াকে বিশেষিত করে থাকে।

এটি ক্রিয়ার গুণ, প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও অর্থ প্রকাশক শব্দ - হিসেবে কাজ করে এবং ক্রিয়ার সময়, স্থান, প্রকার, উৎস, তীব্রতা, উপকরণ ইত্যাদি প্রকৃতিগত অবস্থার অর্থগত ধারণা দেয় (ক্রিয়াবিশেষণ সাধারণত কর্ম ও ক্রিয়ার পূর্বে বসে)। যেমন: রকেট দ্রুত চলে, আমি কালকে পড়বো। কারা যেন গুনগুনিয়ে গান গাচ্ছিল।

ক্রিয়া বিশেষণ গঠনের উপায়

ক্রিয়া বিশেষণ বিভিন্ন ভাবে গঠিত হয়। বিভক্তি চিহ্ন ছাড়া কিংবা যোগে, অসমাপিকা ক্রিয়াপদ যোগে, শব্দদ্বৈত যোগে ক্রিয়াবিশেষণ গঠিত হয়।

i. বিভক্তিহীন শব্দযোগে:  বিশেষ্য পদের সাথে কোনো ধরেণের বিভক্তি যোগ করা ছাড়াও ক্রিয়া বিশেষণ গঠন করা যায়। যেমন: সে অবশ্য আসবে। তুমি ঠিক জান না ইত্যাদি ।

ii. 'এ' বিভক্তিযোগে: বিশেষ্য পদের সাথে "এ" বিভক্তি যোগ করে বিশেষ্য থেকে ক্রিয়া-বিশেষণ গঠন করা যায়। যেমন: সুখে (সুখে থাকতে চাই)

iii. -রূপে, -ভাবে, -সহকারে, -পূর্বক, ইত্যাদি পদ দ্বারা সমাস করেও ক্রিয়াবিশেষণ গঠন করা হয়। যেমন: উত্তম রূপে, সুন্দরভাবে, মনোযোগ সহকারে, প্রদর্শনপূর্বক ইত্যাদি।

iv. -ত, -থ, -ধা,  -শ, -মতো, -এ প্রত্যয়ান্ত পদ দ্বারাও ক্রিয়াবিশেষণ গঠিত হয়। যেমন : সাধারণত, দৃশ্যত, অন্যথা, শতধা, প্রায়শ ক্রমশ, সর্বত্র, একত্র, দত্তবৎ, মৎস্যবৎ, ঠিকমতো, ভালোমতো ইত্যাদি।

v. বিশেষ্য বা বিশেষণের সাথে করে, ইয়ে যোগ করেও ক্রিয়া-বিশেষণ গঠন করা হয়। যেমন: ভালো করে, হঠাৎ করে, ফলিয়ে, তলিয়ে, ছলছলিয়ে ইত্যাদি।

আরো পড়তে পারেন

ক্রিয়া বিশেষণের শ্রেনিবিভাগ

১. ক্রিয়া বিশেষণের পদ সংগঠন অনুযায়ী প্রকারভেদ

পদবিন্যাস অনুযায়ী ক্রিয়া বিশেষণ দুই প্রকার। যথা :

ক. একপদী ক্রিয়া বিশেষণ: আস্তে, জোরে, রেগে, সরবে, সাগ্রহে, অনায়াসে, নির্বিঘ্নে, যথাযথভাবে, শান্তভাবে ইত্যাদি একপদী ক্রিয়াবিশেষণ। বাক্যে প্রয়োগ : ছেলেটা জোরে চিৎকার করে উঠল।

খ. বহুপদী ক্রিয়া বিশেষণ: আস্তে আস্তে, জোরে জোরে, ভয়ে ভয়ে, ঢেকেঢুকে, থেকে থেকে ইত্যাদি বহুপদী ক্রিয়াবিশেষণ। বাক্যে প্রয়োগ : আমরা ভয়ে ভয়ে এগোচ্ছিলাম।

২. ক্রিয়া বিশেষণের অর্থ ও অন্বয়গত প্রকারভেদ

অর্থ ও অন্বয়গত ভাবে ক্রিয়া বিশেষণ ৫ প্রকার। যথা: 

ক. ধরনবাচক ক্রিয়াবিশেষণ (adverb of manner), 

খ. কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণ (adverb of time), 

গ. স্থানবাচক ক্রিয়াবিশেষণ (adverb of place), 

ঘ. নেতিবাচক ক্রিয়া বিশেষণ এবং 

ঙ. সংযোজক ক্রিয়াবিশেষণ (linking adverb)

ক. ধরনবাচক ক্রিয়াবিশেষণ (adverb of manner) কাকে বলে

যে ক্রিয়া বিশেষণ ক্রিয়ার অবস্থা প্রকাশ করে তাকে ধরণবাচক ক্রিয়া বিশেষণ বলে।কোনো ক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হয়, ধরনজ্ঞাপক ক্রিয়াবিশেষণের মাধ্যমে তা বোঝা যায়। 

যেমন: টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। আমরা নির্ভয়ে গুহায় ঢুকলাম। লোকটা হনহন করে হাঁটছে।

খ. কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণ (adverb of time) কাকে বলে

যে ক্রিয়া বিশেষণ ক্রিয়ার সময় প্রকাশ করে তাকে কালবাচক ক্রিয়া বিশেষণ বলে।

যেমন: আজকাল মুঠোফোনের কদর বেড়েছে। বাবা এখনি ঘরে ফিরবেন।

গ. স্থানবাচক ক্রিয়াবিশেষণ (adverb of place) কাকে বলে

যে ক্রিয়া বিশেষণ ক্রিয়া সংঘটনের স্থান নির্দেশ করে তাকে স্থান বাচক ক্রিয়া বিশেষণ বলে।

যেমন : তুমি কবে ঢাকা যাচ্ছ?

স্থানবাচক ক্রিয়াবিশেষণ দ্বিশাব্দিক হলে সহযোগী বিশেষ্যের পরে ওপরে, নিচে, ভেতরে, পেছনে, বাইরে, মধ্যে ইত্যাদি স্থানবাচক অনুসর্গ বসে এবং বিশেষ্যটি র/-এর বিভক্তিযুক্ত সম্বন্ধ পদে রূপ নেয়। যেমন : ওরা পাহাড়ের কোলে বসতি গড়েছে। লোকটা সাঁকোর ওপরে হাঁটছে।

ঘ. নেতি বাচক ক্রিয়া বিশেষণ কাকে বলে

যে ক্রিয়া বিশেষণ না বোধক হয় তাই নেতিবাচক ক্রিয়া বিশেষণ। যেমন: আমটা মিষ্টি নয়

এ ধরণের ক্রিয়া বিশেষণ বাক্যে নেতিবাচক অর্থ প্রকাশ করে থাকে।

ঙ. সংযোজক ক্রিয়াবিশেষণ (linking adverb) কাকে বলে

ক্রিয়াবিশেষণ কখনও কখনও দুটি বাক্যের সংযোগে অংশ নেয়। যেমন : তোমার কথা হয়তো সত্যি, অবশ্য আমি তা মানতে পারছি না। কাজে তার মন নেই, তাছাড়া সে কাজ পারেও না। 

ক্রিয়া বিশেষণ চেনার উপায়

বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদকে কখন, কোথায়, কীভাবে দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই ক্রিয়া বিশেষণ। যেমন: ধীরে ধীরে বায়ু বয়। ভদ্র লোকটি ভেবে চিন্তে কাজ করে। পরে এসো

Note: ক্রিয়া বিশেষণ এর ভাবাধিকরণে সাধারণত ৭মী বিভক্তি হয়।

ক. ধরণ বাচক ক্রিয়া বিশেষণ চেনার উপায়

ক্রিয়াকে কীভাবে দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই ধরণ বাচক বিশেষণ। যেমন: ধীরে ধীরে বায়ু বয়। বায়ু কীভাবে বয়? উত্তর: ধীরে ধীরে সুতরাং এখানে ধীরে ধীরে ধরণ বাচক ক্রিয়া বিশেষণ।

এ ধরনের ক্রিয়াবিশেষণের রূপতাত্ত্বিক প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এগুলোর বেশিরভাগ গঠিত হয়। বিশেষণের সঙ্গে 'ভাবে' বা ‘রূপে' শব্দযোগে। যেমন : কাজটা ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এ ধরনের ক্রিয়াবিশেষণ খুব, অত্যন্ত ইত্যাদি তীব্রক দ্বারা বিশেষিত হতে পারে। যেমন কাজটা খুব ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর আরেকটি প্রচলিত রূপ গঠিত হয় বিশেষণের সঙ্গে 'করে' অসমাপিকা যোগ করে।

খ. কালবাচক ক্রিয়া বিশেষণ চেনার উপায়

ক্রিয়াকে কখন দিয়ে প্রশ্ন করে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটি কাল বাচক ক্রিয়ান বিশেষণ। যেমন: আমি কালকে পড়বো। আমি কখন পড়বো? উত্তর: কাল সুতরাং এখানে কাল হলো কালবাচক ক্রিয়া বিশেষণ

কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণ একশাব্দিক হলে প্রায়শই বিভক্তিহীন বা শূন্য বিভক্তিযুক্ত হয় অথবা এ/য়/তে বিভক্তি গ্রহণ করে।

গ. স্থানবাচক ক্রিয়া বিশেষণ চেনার উপায়

ক্রিয়াকে কোথায় দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় সেটি স্থান বাচক বিশেষণ। যেমন: আমি ঢাকায় থাকি। আমি কোথায় থাকি? উত্তর: ঢাকায় সুতরাং এখানে ঢাকা হলো স্থান বাচক ক্রিয়া বিশেষণ।

স্থানবাচক ক্রিয়াবিশেষণ একশাব্দিক হলে এগুলোর শেষে প্রায়শ স্থানবাচক অধিকরণ-বিভক্তি- এ/য়-তে যুক্ত হয়। যেমন : বড় চাচা ঢাকায় থাকেন । সাপটা ওখানে লুকিয়েছে।

স্থানবাচক ক্রিয়াবিশেষণ বিভক্তিহীনও হতে পারে।

ঘ. নেতিবাচক ক্রিয়া বিশেষণ চেনার উপায়

নেতিবাচক ক্রিয়া বিশেষণ বাক্যের ক্রিয়ার না বোধক অর্থ প্রকাশ করে।

বিশেষ ভাবে মনে রাখতে হবে: না, নি, নেই, ন, নয় এই পদগুলো একা অবস্থায় থাকলে অব্যয়পদ কিন্তু বাক্যে থাকলে ক্রিয়াপদ অথবা ক্রিয়া বিশেষণ হবে। যেমন: বাবা বাড়িতে নেই। কোনো বাক্যে প্রত্যক্ষ (সরাসরি) ক্রিয়াপদ না থাকলে এই নেতি বাচক অব্যয় পদগুলো ক্রিয়া পদের ভূমিকা পালন করে। যেমন: ফুল কি ফুটেনি শাঁখে।

আমাদের শেষ কথা

আশা করি ক্রিয়া বিশেষণ কাকে বলে এবং ক্রিয়া বিশেষণ চেনার উপায় আর্টিকেলটি মাধ্যমে তোমার সফলতায়  অবদান রাখবে। তোমার কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমাদেরকে কমেন্টে বা ফেসবুকের জানাতে পারো। পড়াশোনা সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল পেতে আমাদের সঙ্গেই থাক। ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিও। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আল্লাহ হাফেজ...

আরো পড়তে পারেন

জুয়েল

আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। শিক্ষা সকলের অধিকার। আসুন আমরা প্রত্যেক শিশুর স্বপ্ন জয়ের সারথি হই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন