বিশেষণ পদ কাকে বলে উদাহরণসহ বিস্তারিত

যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, বৈশিষ্ট্য, সংখ্যা, পরিমান ইত্যাদি বোঝায় তাকে বিশেষণ পদ বলে। বিশেষণের ইংরেজি adjective । বাংলা পদ প্রকরণের অন্যতম পদ বিশেষণ পদ। পদ সমন্ধে ধারাবাহিক লেখার আজকের আলোচ্য বিষয় বিশেষণ পদ কাকে বলে এবং প্রয়োজনীয় উদাহরণসহ বিস্তারিত আলোচনা।

বিশেষণ পদ কাকে বলে
বিশেষণ কাকে বলে

বিশেষণ পদ কাকে বলে

বিশেষণ : যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন: 

করিম ভালো ফুটবল খেলে। সুন্দর বাগান। চটপটে ছেলে।

বিশেষণ পদ কত প্রকার ও কী কী

বিশেষণ পদ প্রধানত দু প্রকার। যথা: ১. নাম বিশেষণ ও ২. ভাব বিশেষণ।

১. নাম বিশেষণ পদ কাকে বলে

নাম বিশেষণ: যে বিশেষণ পদ কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষায়িত করে, তাকে নাম বিশেষণ বলে।

যেমন: সে রূপবান ও গুণবান। সুস্থ-সবল দেহকে কে না ভালোবাসে?

নাম বিশেষণের প্রকারভেদ

নাম বিশেষণ ১১ প্রকার

ক. রূপবাচক: নীল আকাশ, সবুজ মাঠ, কালো মেঘ।

খ. গুণবাচক: চৌকস লোক, দক্ষ কারিগর, ঠান্ডা হাওয়া।

গ. ক্রমবাচক: দশম শ্রেণি, সত্তর পৃষ্ঠা, প্রথমা কন্যা।

ঘ. পরিমাণবাচক: বিঘা তিনেক জমি, পাঁচ শতাংশ ভূমি, ইত্যাদি।

ঙ. সংখ্যাবাচক: হাজার লোক, দশ দশা, শ টাকা।

চ. অংশবাচক: অর্ধেক মাটি/বালি, ষোলো আনা দখল, সিকি পথ।

ছ. সর্বনামবাচক: যে ব্যক্তি।

জ. উপাদানবাচক: বেলে মাটি, মেটে কলসি, পাথুরে মূর্তি।

ঝ. প্রশ্নবাচক:  কত দূর পথ? কেমন অবস্থা?

ঞ. নির্দিষ্টতাজ্ঞাপক: এই লোক, সেই ছেলে, ছাব্বিশে মার্চ 

নাম বিশেষণ পদ গঠিন করার উপায় 

নাম বিশেষণ বিভিন্ন ভাবে গঠিত হয়। যেমন :

ক্রিয়াজাত: খাবার পানি, হারানো সম্পত্তি, অনাগত দিন ইত্যাদি

অব্যয়জাত: আচ্ছা মানুষ, উপরি পাওনা, হঠাৎ বড়লোক ইত্যাদি।

সর্বনামজাত: কবেকার কথা, কোথাকার কে স্বীয় সম্পত্তি ইত্যাদি।

সমাসসিদ্ধ: বেকার, নিয়ম-বিরুদ্ধ, জ্ঞানহারা, চৌচালা ঘর ইত্যাদি।

বীাপ্সামূলক:  হাসিহাসি মুখ, কাঁদোকাঁদো চেহারা, ডুবুডুবু নৌকা ইত্যাদি ।

অনুকার অব্যয়জাত: কনকনে শীত, শনশনে হাওয়া, ধিকিধিকি আগুন, টসটসে ফল, তকতকে মেঝে ইত্যাদি ।

কৃদন্ত: কৃতী সন্তান, জানাশোনা লোক, পায়ে-চলা পথ, অতীত কাল,  হৃত সম্পত্তি ইত্যাদি।

তদ্ধিতান্ত:  জাতীয় সম্পদ, মেঠো পথ, নৈতিক বল ইত্যাদি।

উপসর্গযুক্ত: নিখুঁত কাজ, নির্জলা মিথ্যে, অপহৃত সম্পদ ইত্যাদি।

বিদেশি: নাস্তানাবুদ অবস্থা, বেওয়ারিশ মাল, লাখেরাজ সম্পত্তি দরপত্তনি, তালুক

আরো পড়তে পারেন

২. ভাব বিশেষণ পদ কাকে বলে

ভাব বিশেষণ: যে পদ বিশেষ্য ও সর্বনাম ভিন্ন অন্য পদকে বিশেষায়িত করে, তাকে ভাব বিশেষণ বলে।

যেমন : গাড়িটা বেশ জোরে চলছে।

ভাব বিশেষ্যের প্রকারভেদ

ভাব বিশেষণ চার প্রকার। যথা : ক. ক্রিয়া বিশেষণ, খ. বিশেষণের বিশেষণ, গ. অব্যয়ের বিশেষণ এবং ঘ. বাক্যের বিশেষণ।

ক. ক্রিয়া বিশেষণ কাকে বলে

যে পদ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে, তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে।

যেমন: i. ক্রিয়া সংগঠনের ভাব: ধীরে ধীরে বায়ু বয়।

ii. ক্রিয়া সংগঠনের কাল: পরে একবার এসো। 

iii. ক্রিয়া সংঘটনের স্থান: আমার সামনে দাঁড়াও। এখানে বস ইত্যাদি।

ক্রিয়া বিশেষণ গঠনের উপায়

ক্রিয়া বিশেষণ বিভিন্ন ভাবে গঠিত হয়।

i. বিভক্তিহীন শব্দযোগে:  বিশেষ্য পদের সাথে কোনো ধরেণের বিভক্তি যোগ করা ছাড়াও ক্রিয়া বিশেষণ গঠন করা যায়। যেমন: সে অবশ্য আসবে। তুমি ঠিক জান না ইত্যাদি ।

ii. 'এ' বিভক্তিযোগে: বিশেষ্য পদের সাথে "এ" বিভক্তি যোগ করে বিশেষ্য থেকে ক্রিয়া-বিশেষণ গঠন করা যায়। যেমন:সুখে (সুখে থাকতে চাই)

iii. -রূপে, -ভাবে, -সহকারে, -পূর্বক, ইত্যাদি পদ দ্বারা সমাস করেও ক্রিয়াবিশেষণ গঠন করা হয়। যেমন: উত্তম রূপে, সুন্দরভাবে, মনোযোগ সহকারে, প্রদর্শনপূর্বক ইত্যাদি। 

iv. -ত, -থ, -ধা,  -শ, -মতো, -এ প্রত্যয়ান্ত পদ দ্বারাও ক্রিয়াবিশেষণ গঠিত হয়। যেমন : সাধারণত, দৃশ্যত, অন্যথা, শতধা, প্রায়শ ক্রমশ, সর্বত্র, একত্র, দত্তবৎ, মৎস্যবৎ, ঠিকমতো, ভালোমতো ইত্যাদি।

v. বিশেষ্য বা বিশেষণের সাথে করে, ইয়ে যোগ করেও ক্রিয়া-বিশেষণ গঠন করা হয়। যেমন: ভালো করে, হঠাৎ করে, ফলিয়ে, তলিয়ে, ছলছলিয়ে ইত্যাদি।

ক্রিয়া বিশেষণ সমন্ধে বিস্তারিত জানতে পড়ুন

খ. বিশেষণের বিশেষণ 

যে পদ নাম বিশেষণ অথবা ক্রিয়া বিশেষণকে বিশেষায়িত করে, তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে।

বিশেষণের বিশেষণ দুই প্রকার। যথা:

i. নাম বিশেষণের বিশেষণ: সামান্য একটু দুধ দাও। এ ব্যাপারে সে অতিশয় দুঃখিত।

ii. ক্রিয়া-বিশেষণের বিশেষণ: রকেট অতি দ্রুত চলে।

বাক্যে ক্রিয়া-বিশেষণের ব্যবহার

i. ক্রিয়া সংঘটনের ভাব: ক্রিয়া-বিশেষণের মাধ্যমে কাজটি কেমনভাবে সংঘটিত হলো তা বোঝায়। যেমন : সে দ্রুত দৌড়াতে পারে, এটা ভালোভাবে বোঝা যাবে না ইত্যাদি । 

ii. ক্রিয়া সংঘটনের সময়: ক্রিয়া-বিশেষণের মাধ্যমে ক্রিয়া সংঘটনের সময় জানা যায়। যেমন: আজ যখন সে আসবে তখন তাকে থাকতে বলো। সেদিন তোমাকে পাই নি ইত্যাদি।

 গ. অব্যয়ের বিশেষণ কাকে বলে

যে ভাব-বিশেষণ অব্যয় পদ অথবা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষায়িত করে, তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে।

যথা: ধিক তারে, শত ধিক নির্লজ্জ যে জন।

ঘ. বাক্যের বিশেষণ কাকে বলে

কখনো কখনো কোনো বিশেষণ পদ একটি সম্পূর্ণ বাক্যকে বিশেষায়িত করতে পারে, তখন তাকে বাক্যের বিশেষণ বলে

যেমন: দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ আবার নানা সমস্যা জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাস্তবিকই আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের প্রয়োজন।

 বিশেষণের অতিশায়ন কাকে বলে

বিশেষণ পদ যখন দুই বা ততোধিক বিশেষ্য পদের মধ্যে গুণ, অবস্থা, পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ের তুলনায় একের উৎকর্ষ বা অপকর্ম বুঝিয়ে থাকে, তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে। 

যেমন: যমুনা একটি দীর্ঘ নদী, পদ্মা দীর্ঘতর, কিন্তু মেঘনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। সূর্য, পৃথিবী ও চন্দ্রের মধ্যে তুলনায় সূর্য বৃহত্তম, পৃথিবী চন্দ্রের চেয়ে বৃহত্তর এবং চন্দ্র পৃথিবী অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর।

বিশেষণের অতিশায়নের নিয়ম 

খাঁটি বাংলা বিশেষণের অতিশায়ন

i. বাংলা শব্দের অতিশায়নে দুয়ের মধ্যে তুলনার ক্ষেত্রে চাইতে, চেয়ে অপেক্ষা, থেকে ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেত্রে দুয়ের মধ্যে তারতম্য বোঝাতে উপমান বিশেষ্যটি প্রায়ই ষষ্ঠী বিভক্তিযুক্ত হয়ে থাকে এবং মূল বিশেষণের রূপটির কোনো পরিবর্তন হয় না। 

যেমন: হাতি বাঘের চেয়ে বড় /বাঘের চেয়ে হাতি বড়। গরুর থেকে ঘোড়ার দাম বেশি। বাঘের চেয়ে সিংহ বলবান।

ii. দুটি বিশেষ্যের মধ্যে উৎকর্ষ বা অপকর্ষের মাত্রা জোর দিয়ে বোঝাতে বিশেষণের আগে ভিন্ন পদ বা অল্প, কম, একটু একটুখানি অনেকটা ইত্যাদি বিশেষণীয় বিশেষণ যোগ করতে হয়। 

যেমন: মোষ গরুর চেয়ে একটু বড়/ গরুর চেয়ে মোষ একটু বড়। গাধা ছাগলের চেয়ে অনেক বড়/ ছাগলের চেয়ে গাধা অনেক বড়। 

iii. বহুর মধ্যে অভিশায়ন: অনেকের মধ্যে একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বোঝাতে মূল বিশেষণের কোনো পরিবর্তন হয় না। মূল বিশেষণের পূর্বে সবচেয়ে সবচাইতে সবথেকে, সর্বাপেক্ষা, সর্বাধিক ইত্যাদি শব্দ যোগ করে নিতে হয়। 

যেমন: ইভা, বিভা, সুভা এ তিন বোনের মধ্যে ইভা সবচেয়ে বড়। 

 খ.  তৎসম শব্দে বিশেষণের অতিশায়ন

i. বাংলা রীতিতে বিশেষণের অতিশায়নের সময় বিশেষণের সঙ্গে নতুন কোনো প্রত্যয় যুক্ত হয় না, শুধু তার আগে বিভিন্ন শব্দ বা বিভক্তি যুক্ত হয়। কিন্তু ইংরেজির মতো সংস্কৃতে এসব ক্ষেত্রে বিশেষণ পদের সাথে বিভিন্ন প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন:

দীর্ঘ⇨ দীর্ঘতর, দীর্ঘতম

বৃহৎ⇨ বৃহত্তর, বৃহত্তম

প্রিয়⇨ প্রিয়তর, প্রিয়তম

ii. বহুর মধ্যে অতিশায়নে তুলনীয় বস্তুর উল্লেখ না করেও 'তম' প্রত্যয় যুক্ত হতে পারে। যেমন: মেঘনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। দেশসেবার মহত্তম ব্রতই সৈনিকের দীক্ষা।

iii. কিছু কিছু সংস্কৃত তর, তম- যুক্ত বিশেষণ পদ বাংলায় তাদের তুলনার ভাব হারিয়ে সাধারণ বিশেষণ পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন: হত্যা করা গুরুতর অপরাধ। সেবা একটি উত্তম কাজ।

iv. তৎসম শব্দে দুয়ের মধ্যে তুলনায় আবার পুংলিঙ্গ 'ঈয়স' এবং স্ত্রীলিঙ্গে 'ঈয়সী' এবং বহুর মধ্যে তুলনায় 'ইণ্ঠ' যুক্ত হয়। বাংলায় শুধু "ইষ্ঠ" দ্বারা নিষ্পন্ন বিশেষণগুলো ব্যবহৃত হয়। যেমন:

লঘু⇨ লঘিষ্ঠ

গুরু⇨ গরিষ্ঠ

শ্রেয়⇨ শ্রেষ্ঠ

v. দুয়ের মধ্যে তুলনাবাচক 'য়স' বাংলায় ব্যবহৃত না হলেও 'ঈয়সী' ব্যবহৃত হয়, কিন্তু তা আর তুলনা বোঝায় না, সাধারণ বিশেষণের মতো ব্যবহৃত হয়। যেমন : প্রেয়সী, মহীয়সী, ভূয়সী ইত্যাদি।

নির্ধারক বিশেষণ : দ্বিরুক্ত শব্দ ব্যবহার করে যখন একের বেশি কোনো কিছুকে বোঝানো হয়, তখন তাকে নির্ধারক বিশেষণ বলে। যেমন:

i. রাশি রাশি ভারা ভারা ধান।

ii. লাল লাল কৃষ্ণচূড়ায় গাছ ভরে আছে। গেছে।

iii. নববর্ষ উপলক্ষে ঘরে ঘরে সাড়া পড়ে iv. এত ছোট ছোট উত্তর লিখলে হবে না ইত্যাদি।

v. এত বড় বড় কথা বলতে নেই।

vi. কালো কালো মেঘ জড় হয়েছে।

আমাদের শেষ কথা

আশা করি বিশেষণ পদ কাকে বলে আর্টিকেলটি মাধ্যমে তোমার সফলতায়  অবদান রাখবে। তোমার কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমাদেরকে কমেন্টে বা ফেসবুকের জানাতে পারো। পড়াশোনা সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল পেতে আমাদের সঙ্গেই থাক। ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিও। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আল্লাহ হাফেজ...

 আরো পড়তে পারেন

জুয়েল

আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। শিক্ষা সকলের অধিকার। আসুন আমরা প্রত্যেক শিশুর স্বপ্ন জয়ের সারথি হই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন