লেখ্য ভাষায় বক্তব্যকে যথাযথ ভাবে প্রকাশ করার জন্যে কতগুলো চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, সেসব চিহ্নকে বিরাম চিহ্ন বার যতি চিহ্ন বলে। লেখ্য ভাষার ভাবকে স্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন করার জন্য বিরাম চিহ্নের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের নিয়ম জানা ছাড়া সঠিক রূপে বক্তব্য লেখা সম্ভব নয়।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরই প্রথম বাংলা গদ্যে ইংরেজির অনুসরণে বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের নিয়ম প্রবর্তন করেন। বাংলা ভাষায় সব মিলিয়ে ১৭ টি বিরাম চিহ্নের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এ আর্টিকেলে বিস্তারিত উদাহরণসহ বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে।
বিরাম চিহ্ন |
বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের নিয়ম
। (দাঁড়ি) - এর ব্যবহার
১.নির্দেশাত্মক ও অনুজ্ঞামূলক বাক্যের
শেষে দাঁড়ি বসে। যেমন: রহমান সাহেব ঢাকায় বসবাস করেন।
২.
পরোক্ষ উক্তিতে প্রশ্নের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্নের পরিবর্তে দাঁড়ি বসে। যেমন: স্যার জানতে চাইলেন, পরীক্ষা কেমন হয়েছে ।
৩.
কখনো কখনো ক্রমবাচক সংখ্যার পর দাঁড়ি বসে।
যেমন: ১. আম, ২.
জাম, ৩. কাঠাল
? (প্রশ্নবোধক
চিহ্ন) এর ব্যবহার
১.
সরাসরি প্রশ্ন করতে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: তোমার নাম কী
২.
সন্দেহ, সংশয় বোঝাতে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: তিনি সুস্থ আছেন তো?
৩.
কোন বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হতে পারলে
প্রশ্নবোধক চিহ্ন বলে। যেমন: মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম ১৬০৭ (?) খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
8. বাঙ্গাত্মক
মনোভাব বোঝাতে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে। যেমন: তোমার মতো সাধু (?) লোক খুঁজে পাওয়া যায় না।
! (বিস্ময় বোধক চিহ্ন) এর ব্যবহার
১.
বিস্ময় প্রসঙ্গে বাক্যের শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন বসে। যেমন: বলছ কী! তিনি মারা গিয়েছেন?
২.
ঘৃণা প্রকাশে এই চিহ্ন বসে।
যেমন: ছি! এমন কাজ তুমি করতে পারলে ।
৩.
ভয় প্রকাশে বিস্ময়বোধক চিহ্ন বসে। যেমন: বাচাও! বাঁচাও!
৪.
আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশে এই চিহ্ন বসে।
যেমন: বাহ! আমরা খেলায় জিতেছি।
৫.
দুঃখ, বিষাদ প্রকাশে এই চিহ্ন বসে।
যেমন: হায়! আমি সর্বস্ব হারালাম।
৬.
কখনো কখনো সম্বোধনে বিস্ময়বোধক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: মহারাজ! আমায় কেন ডেকেছেন ?
: (কোলন) এর ব্যবহার
১.
বাক্যে ভিন্ন প্রসঙ্গ আনয়নের জন্যে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন: পরিবারে অভাব নেই : তাই শান্তি শৃঙ্ক্ষালা বজায় আছে । আমার দৃঢ়
বিশ্বাস: সে আসবেই।
২.
উদাহরণ দিতে কোলন বসে। যেমন: কারক ছয় প্রকার যথা
: কর্তৃ, কর্ম, করণ...
৩.
বাক্যে যথা, যেমন অর্থেও কোলন বসে। যেমন: বাংলা লেখ্য ভাষার দুটি রূপ: সাধুরীতি ও চলিতরীতি
৪.
নাটকের চরিত্রের নামের পর সংলাপের আগে
কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন: মা: বাবা পড়তে বস।
৫.
শিরোনাম ও উপশিরোনামের মাঝে
কোলন বসে। যেমন: বাংলাদেশেনা ছোটগল্প: গ্রামীণ সংস্কৃতি
৬.
দরখাস্ত ও বিভিন্ন রকমের
ফর্মে ভুক্তি ও উপভুক্তির পর
কোলন বসে। যেমন:
প্রতি:
নাম
:
পিতার
নাম:
শিক্ষাগত
যোগ্যতা :
৭.
উদ্ধৃতি, বিবৃতি, ঘোষণা ইত্যাদির পূর্বে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন: মহানবী বললেন: “ক্রীত দাস দাসীদের প্রতি সদয় হও ।"
৮.
ক'টা বেজে কত
মিনিট বোঝাতে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন: ৩:২৫ টা
৯.
প্রশ্ন তৈরিতে কোথাও কোথাও কোলন বসে। যেমন: টীকা লেখ: শকুন্তলা
১০.
গণিতের অনুপাত বোঝাতে কোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন- নিরক্ষর ও স্বাক্ষরের অনুপাত
৪:২
১১.
কোন বিষয়ের নামের পর ব্যাখ্যার পূর্বে
কোলন বসে। যেমন- দাঁড়ি: বাক্যের শেষের যতি চিহ্নই দাঁড়ি ।
আরো পড়তে পারেন
:- (কোলন ড্যাস) এর ব্যবহার
১.
উদাহরণ দিতে কোলন ড্যাস ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। যেমন: পদ পাঁচ প্রকার
। যথা:- বিশেষ্য, সর্বনাম ... ইত্যাদি ।
২.
কখনো কখনো যে স্থানে কোলন
ব্যবহৃত হয় সেই স্থানে কোলন ড্যাস প্রয়োগ করা যায়।
— (ড্যাস) এর ব্যবহার
১.
উদাহরণ দিতে যেমন, যথা এর পর ড্যাস
ব্যবহার করা যায়।
২.
একই বিষয়ের বর্ণনা দানে খণ্ড বাক্য ব্যবহারের পূর্বে ড্যাস বসে। যেমন: চারদিকে শোভিল কাঞ্চন —
৩.
বাক্যে উদ্ধৃতি, দৃষ্টান্ত যুক্ত করার জন্যে ড্যাস ব্যবহার হয়। যেমন: তিনি ইহজীবনে সবই পেয়েছেন — বাড়ি, গাড়ি, সম্পদ।
8. বাক্যের
গঠনে আকস্মিক পরিবর্তন হলে ড্যাস বসে। যেমন: কহিলা কমলা সতী কমলা নয়না — “হায়, সখী বীরশুণ্য এবে লঙ্কাপুরী।
৫.
দীর্ঘ বাক্যে বিভিন্ন ধরনের ভাব প্রকাশে ড্যাস ব্যবহার হয়। যেমন: তুমি বিশ্বাস কর — মিথ্যে বলি নি
৬.
দ্বিধা প্রকাশে কখনো কখনো ড্যাস বসে। যেমন: আমি — আমি — এ কাজ করি নি।
৭.
শুন্য স্থান পূরণে লুপ্ত পদ বা পদসমূহের
স্থানে ড্যাস বসে। যেমন: বাংলাদেশে — জেলা রয়েছে।
৮.
অভিধানে শব্দ ও অর্থের মাঝখানে
ড্যাস বসে। যেমন: শশী- চাঁদ
৯.
স্থান ও কালগত দূরত্ব,
ব্যবধান নির্দেশে ড্যাস ব্যবহৃত হয়। যেমন: ঢাকা — ভৈরব রবিবার — বৃহস্পতিবার
১০.
ভ্রমণ পথের পরিচিতি তুলে ধরার জন্যেও ড্যাস ব্যবহার করা হয়। যেমন: ঢাকা — কলিকাতা
১১.
বাক্যের মধ্যে ভাবের গাঢ়ত্ব বোঝাতে, সহসা অন্য বাক্যাংশ আনয়নে ড্যাস ব্যবহৃত হয় যেমন: এই লোকটি — আমি সত্যি
বলছি — আমার খুব উপকার করেছে ।
১২.
কতকগুলো বিশেষ্য ও জিনিসকে এক
সাথে বোঝাতে ড্যাস ব্যবহার করা হয়। যেমন: চাল, ডাল, নুন, তেল- সব কিছুই ঘরে
আছে ।
, (কমা) এর ব্যবহার
১.
বাক্য পাঠকালে অর্থ বিভাগ দেখাবার জন্যে যেখানে অল্প বিরতির প্রয়োজন সেখানে কমা (.) ব্যবহৃত হয়। যেমন- পরিশ্রম কর, উন্নতি করবে।
২.
পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদ একসঙ্গে বসলে
শেষের পদ ছাড়া বাকি
সবগুলোতে কমা বসে। যেমন- কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ মানুষের সহজাত বৃত্তি।
৩.
সম্বোধন পদের পরে কমা বসে। যেমন- সখিনা, এদিকে এসো।
৪.
জটিল বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেকটি খণ্ড বাক্যের পরে কমা বসে। যেমন- কাল যে ছেলেটি এসেছিল,
সে অত্যন্ত মেধাবী।
৫.
তারিখ লিখতে মাস, বার ইত্যাদির পর কমা বসবে।
যেমন-১লা মার্চ, সোমবার, ২০০১ সাল
৬.
বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের
পর এবং রাস্তা, মহতা ইত্যাদি উল্লেখ করার সময় প্রতিটির পর কমা বসবে। যেমন- ১১০, ছোট মসজিদ রোড, লালমাটিয়া, ঢাকা।
৭.
নামের পরে ডিগ্রী সংযোজিত হলে কমা বসে। যেমন- আবদুর রহিম, এম, এ, বি-এল।
৮.
ইলে প্রত্যয় যুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়ার পরে কমা বসে। যেমন- ভূমি আসিলে, আমরা রওনা হইব।
৯.
প্রত্যক্ষ বাক্যে বক্তার ক্রিয়া যেখানে শেষ হয় সেখানে কমা বসে। যেমন- শিক্ষক বললেন, সূর্য পূর্বদিকে উঠে ।
১০.
একজাতীয় শব্দ সংযোজক অব্যয়ের মাধ্যমে জোড়ায় জোড়ায় এলে প্রতি জোড়ার পর কমা বসে।
যেমন- ভাল ও মন্দ, সৎ
ও অসৎ দুই রয়েছে সমাজে।
১১.
সমজাতীয় বাক্যাংশের মাঝে কমা বসে। যেমন- আমরা একসাথে এলাম, একত্রে খেলাম, অতঃপর বাইরে বেরুলাম।
১২.
হ্যাঁ, না ইত্যাদি অধ্যয়কে
মূল বাক্য থেকে বিচ্ছিন্ন করতে কমা বসে। যেমন- হ্যাঁ, আমি এ কাজ করেছি।
১৩.
প্রশ্নসূচক বাক্যে বিশেষ বাকভঙ্গির পূর্বে কমা বসে। যেমন- তুমি এবার পাশ করতে পারবে, তাই না?
; (সেমিকোলন) এর ব্যবহার
কমার
চেয়ে বেশী সময় বিরতির প্রয়োজন হলে সেখানে সেমিকোলন বসে ।
১.
দুটি বাক্যের মধ্যে নিকট সম্বন্ধ থাকলে সেমিকোলন হয়। যেমন- আহম্মদ শান্ত; কিন্তু তার ভাই বড় দুরন্ত ।
২.
দুটি বাক্যের মধ্যে একই অর্থ সম্পর্কে বিদ্যমান থাকলে সেমিকোলন বসে। যেমন: আজ আকাশটা ভাল নয়; ঘন ঘন বৃষ্টি
হচ্ছে।
৩.
খণ্ড বাক্যের পর সেমিকোলন বসে।
যেমন: কৃষ্ণচূড়া ফুল দেখতে সুন্দর বটে; কিন্তু এর কোন গন্ধ
নেই।
৪.
কোন তালিকার একাধিক ব্যক্তির নাম তাদের পদবীসহ থাকলে সেমিকোলন বসে। যেমন- সোবহান সাহেব, সভাপতি; মনিরুজ্জামান, সম্পাদক; আবুল হোসেন কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
৫.
সমজাতীয় দ্ৰব্য বিষয়কে পৃথক করার প্রয়োজনে সেমিকোলন বলে। যেমন- চাল, ডাল, তেল; লাউ, শশা, আলু সবই কিনতে হবে।
(নোট
: অনেক ক্ষেত্রে কমা, সেমিকোলন, কোলন ইত্যাদি বিরামচিহ্ন গুলোর ব্যবহার অভিন্ন হতে দেখা যায়।)
- (হাইফেন) এর ব্যবহার
১.
দ্বন্দ্ব সমাসের সমাসবদ্ধ পদের মাঝে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন: নদ-নদী, লাভ-লোকসান, দেশী-বিদেশী ইত্যাদি।
২.
পংক্তির শেষে অসমাপ্ত শব্দের শেষে হাইফেন বসে। যেমন: আবদুল করিম ভাল লোক নন, তিনি একজন সুবিধাবাদী-
৩.
কখনো কখনো উপসর্গের পর হাইফেন বসে।
যেমন: অ-কাজ, বে-আকেল, কু-মতলব ইত্যাদি।
৪.
দ্বিরুক্ত শব্দের মাঝে কখনো কখনো হাইফেন বসে। যেমন: জনে - জনে জিজ্ঞাসিব।
৫.
সংখ্যা বা পরিমাণগত ব্যবধান
বোঝাতে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। যেমন: ২-৩ দিনের
মধ্যেই তিনি এসে পড়বেন।
৬.
কখনো কখনো সংখ্যাবাচক শব্দের পর বিভক্তির পূর্বে
হাইফেন হয় । যেমন: ২-এর ঘরে শূন্য
বসাও।
৭.
কোন বিশেষ চুক্তি, ঘটনার সাথে স্থানের নামের সংযুক্তিতে হাইফেন বসে। যেমন: জেনেভা-সম্মেলন, ঢাকা-চুক্তি, ইত্যাদি।
৮.
কোন একটি বর্ণ অন্য শব্দের সঙ্গে সম্পর্কিত হলে হাইফেন বসে। যেমন: হ-য-ব-ল
' ' (একক উদ্ধৃতি চিহ্ন) এর ব্যবহার
১.
সাধারণ কোন বিশেষ গ্রন্থের নাম, কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদির নাম উদ্ধৃতি করতে একক উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: নজরুলের 'অগ্নিবীণা' ও 'চক্রবাক' দুইই
আমি পড়েছি।
২.
বাকাস্থিত কোন বিশেষ শব্দ, শব্দগুচ্ছকে পৃথক করতে, গুরুত্ব দিতে একক উদ্ধৃতি চিহ্ন বসে। যেমন- 'আক্কেল গুড়ুম' বাগধারাটি দিয়ে একটি বাক্য রচনা কর।
৩.
বাক্যস্থিত কোন প্রবাদ-প্রবচন, বাগধারা বা বিশেষ পদ
সম্পর্কে বক্তব্য প্রকাশে একক উদ্ধৃতি ব্যবহৃত হয়। যেমন: 'অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া' শব্দের অর্থ অনেকেই জানে না।
8. বাক্যের
মধ্যে কারো বক্তব্য উদ্ধৃতি করলে একক উদ্ধৃতি চিহ্ন বসে। যেমন- আলালের 'বাচাও বাচাও' চিৎকার শুনেই আমরা দৌড় দিলাম।
৫.
উদ্ধৃতির মধ্যে উদ্ধৃতি থাকলে ভেতরের উদ্ধৃতিতে একক উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন— স্যার বললেন, “তুমি সহজ ভাষায় 'চরিত্র অমূল্য সম্পদ' এর ভাব সম্প্রসারণ
লেখ।"
" " (জোড় উদ্ধৃতি চিহ্ন) এর ব্যবহার
১.
কোন ব্যক্তির বক্তব্য, গ্রন্থের চরণ উদ্ধৃতি করতে জোড় উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: বাবা বলিলেন, “আমাকে কাল ঢাকা যেতে হচ্ছে। তাই আমি বাড়ি থাকতে পারছি না।"
২.
কোন বাক্যে উদ্ধৃতির মধ্যে উদ্ধৃতি থাকলে মূল উদ্ধৃতিতে জোড় উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন- তিনি বললেন, "আমি রাস্তার মোড়ে যেতেই সবুর 'এদিকে আস বলে' আমাকে
ডাক দিল ।"
' (ইলেক বা লোপ চিহ্ন) এর ব্যবহার
১.
শব্দ থেকে এক বা একাধিক
বর্ণ লোপ পেলে, বর্জন করা হলে, তা বোঝানোর জন্যে
ইলেক চিহ্ন বসে। যেমন: '০৫ সাল
২.
অসমাপিকা ক্রিয়ার চলিত রূপের ক্ষেত্রে ইলেক চিহ্ন প্রয়োগের দরকার নেই। যেমন-বলিয়া> বলে, করিয়া> কারে হইলে > হলে ইত্যাদি ।
( ) ( প্রথম বন্ধনী ) এর ব্যবহার
১.
বাক্যস্থিত কোন পদ বা পদগুচ্ছকে
সুস্পষ্টভাবে বোঝানোর জন্যে প্রথম বন্ধনী ব্যবহার করা হয়। যেমন- পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এক সময় পশ্চিমা
শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক শাসিত হয়েছিল ।
২.
নাটকের সংলাপের চরিত্রের ক্রিয়া নির্দেশ করতে প্রথম বন্ধনী ব্যবহার করা হয়। যেমন: রাজা: তবে আয় দেখি তোর বাহুতে কত শক্তি (যুদ্ধ
শুরু)।
[] (তৃতীয় বন্ধনী) এর ব্যবহার
১.
মূল গ্রন্থের মধ্যে কোন ভুল থাকলে তা থেকে উদ্ধৃতি
করার সময় ভুল স্থানটি চিহ্নিত করার জন্যে তৃতীয় বন্ধনী ব্যবহার করা হয়। যেমন: কাজী নজরুল ইসলাম অগ্নিবিনা [অগ্নিবীণা ] রচনা করেছেন।
..... (বর্জন চিহ্ন)
কোন
কবিতা বা গদ্য রচনা
থেকে উদ্ধৃত করার সময় অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় অংশ উদ্ধৃত করার সময় বর্জন চিহ্ন বলে। যেমন:
" নাই
ঠাই নাই
..... গিয়েছে
ভরি।
. (বিন্দু) এর ব্যবহার
১.
কোন ডিগ্রি সংক্ষেপে প্রকাশ করতে হলে ডিগ্রির প্রথম বর্ণের পর বিন্দু বসে।
যেমন- বি.এ., এম.এ., এম.কম. ডি.লিট, ড. ডা. ইত্যাদি
।
২.
ক্রমবাচক সংখ্যার শেষে বিন্দু চিহ্ন দেয়া হয়। যেমন: বাক্যের তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যথা: ১. আকাঙ্ক্ষা, ২. যোগ্যতা,৩. আসক্তি।
/ (বিকল্প চিহ্ন) এর ব্যবহার
১.
দুই বা ততোধিক সংখ্যা,
শব্দ, বাক্যের মধ্যে যে কোনটি হতে
পারে এমন বুঝালে বিকল্প চিহ্ন হয়। যেমন: সকালে ৫/৬ জন
যুবক এসেছিল।
২.
কবিতার পরের বা নিচের চরণটি
বোঝানোর জন্যে বিকল্প চিহ্নটি ব্যবহৃত হয়। যেমন- সকলের তরে সকলে আমরা/ প্রত্যেকে আমরা পরের তরে ।
৩.
ভগ্নাংশকে এক লাইনে প্রকাশ
করতে বিকল্প চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: ১/২
৪.
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের মধ্যে বিকল্প চিহ্নের ব্যবহার রয়েছে। যেমন: অপ্রয়োজনীয় অংশ কেটে দাও: বাংলাদেশে সমুদ্র বন্দর হলো ঢাকা/চট্টগ্রাম / রাজশাহী
৫.
তারিখ লিখতে বিকল্প চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন: ২৪/১২/20২২
৬.
বাড়ির, অফিসের ঠিকানায় বিকল্প চিহ্নের ব্যবহার হয়। যেমন- ৩৮/২, বাংলাবাজার,
ঢাকা
বিরাম চিহ্নের ব্যবহার
বিরাম চিহ্ন | বাংলা নাম | ইংরেজি নাম | বিরামের পরিমাণ |
---|---|---|---|
। | দাঁড়ি | Full stop | ১ সেকেন্ড |
? | প্রশ্নবোধক চিহ্ন | Note of interrogation | ঐ |
! | বিস্ময়বোধক চিহ্ন | Note of Exclamation | ঐ |
: | কোলন | Colon | ঐ |
— | ড্যাস | Dash | ঐ |
;- | কোলন ড্যাস | Colon Dash | ঐ |
, | কমা | Comma | ১ উচ্চারণ করতে যত সময় লাগে |
; | সেমিকোলন | Semicolon | ১ বলার দ্বিগুণ সময় |
- | হাইফেন | Hyphen | থামার প্রয়োজন নেই |
' ' | একক উদ্ধৃতি চিহ্ন | ঐ | |
" " | জোড় উদ্ধৃতি চিহ্ন | Inverted comma | ঐ |
' | ইলেক চিহ্ন | Apostrophe | ঐ |
() | প্রথম বন্ধনী | First bracket | ঐ |
[] | তৃতীয় বন্ধনী | Third bracket | ঐ |
..... | বর্জb চিহ্ন | Asterisk | ঐ |
. | বিন্দু | Dot | ঐ |
/ | বিকল্প চিহ্ন | Slash | ঐ |
আমাদের শেষ কথা
আশা করি বিরাম চিহ্ন ব্যবহারের নিয়ম এবং বিরাম চিহ্নের ব্যবহার তোমার সফলতায় অবদান রাখবে। তোমার কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমাদেরকে কমেন্টে বা ফেসবুকের জানাতে পারো। পড়াশোনা সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল পেতে আমাদের সঙ্গেই থাক। ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিও। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আল্লাহ হাফেজ...