উক্তি পরিবর্তন করার নিয়ম

বক্তার বক্তব্যকে সুনির্দিষ্ট করার প্রয়োজনে উক্তি ও উক্তি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। রাষ্ট্রের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সংবাদপত্রে কিংবা অন্য কোনো গণমাধ্যমে কী ধরনের উক্তি করেছেন, সেক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ উক্তিটির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।যেমন : গতকাল প্রেসিডেন্ট মহোদয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার মূল নির্যাস উদ্ধারে প্রথমত প্রত্যক্ষ উক্তির দরকার।

পরে তা বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন বক্তার পরোক্ষ উক্তিতে মূল্যবান বার্তাটি সর্বস্তরে পৌঁছে যায়। সুতরাং ব্যক্তির প্রত্যক্ষ উক্তি যেমন প্রয়োজন তেমনি তার অনুপস্থিতিতে পরোক্ষ উক্তির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তাই উক্তি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

উক্তি পরিবর্তন
উক্তি পরিবর্তন

উক্তি কাকে বলে

"উক্তি" ইংরেজি হলো Narration. কোনো কথকের বাক কর্মের নামই উক্তি। অর্থ্যাৎ একজন বক্তার মুখ দিয়ে যে কথা বের হয় তাই হলো উক্তি।

উক্তি কত প্রকার

উক্তি দুই প্রকার। যথা: ১. প্রত্যক্ষ উক্তি ২. পরোক্ষ উক্তি

 প্রত্যক্ষ উক্তি কাকে বলে

যে বাক্যে বক্তার কথা অবিকল উদ্ধৃত হয়, তাকে প্রত্যক্ষ উক্তি বলে। যেমন: তিনি বলেন, "বইটি আমার দরকার।"

পরোক্ষ উক্তি কাকে বলে

যে বাক্যে বক্তার উক্তি অন্যের জাবানিতে রূপান্তর করে প্রকাশ করা হয়, তাকে পরোক্ষ উক্তি বলে। যেমন: তিনি বললেন যে, বইটি তার দরকার।

উক্তি পরিবর্তনের নিয়ম

১. প্রত্যক্ষ উক্তিতে বক্তার বক্তব্যটুকু উদ্ধরণ চিহ্নের ("    ") অন্তর্ভূক্ত থাকে। পরোক্ষ উক্তিতে উদ্ধরণ চিহ্ন লোপ পায়। প্রথমে উদ্ধরণ চিহ্নের আগে "যে" অব্যয়টি ব্যবহার করতে হয়। বাক্যের সঙ্গতি রক্ষার জন্য উক্তিতে ব্যবহৃত বক্তার পুরুষের পরিবর্তন করতে হয়। যেমন :

প্রত্যক্ষ উক্তি : খোকা বলল, “আমার বাবা বাড়ি নেই ।”

পরোক্ষ উক্তি : খোকা বলল যে, তার বাবা বাড়ি ছিলেন না।

২. বাক্যের অর্থ-সঙ্গতি রক্ষার জন্য সর্বনামের পরিবর্তন করতে হয়। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি : রশিদ বলল, “আমার ভাই আজই ঢাকা যাচ্ছেন।"

পরোক্ষ উক্তি : রশিদ বলল যে, তার ভাই সেদিনই ঢাকা যাচ্ছিলেন।

৩. প্রত্যক্ষ উক্তির কালবাচক পদকে পরোক্ষ উক্তিতে অর্থ অনুসারী করতে হয়। যেমন :

প্রত্যক্ষ উক্তি : শিক্ষক বললেন, “কাল তোমাদের ছুটি থাকবে।"

পরোক্ষ উক্তি : শিক্ষক বললেন যে, পরদিন আমাদের ছুটি থাকবে।

৪. প্রত্যক্ষ উক্তির বাক্যের সর্বনাম এবং কালসূচক শব্দের পরোক্ষ উক্তিতে নিম্নলিখিত পরিবর্তন সংঘটিত হয় :

প্রত্যক্ষ পরোক্ষ প্রত্যক্ষ পরোক্ষ প্রত্যক্ষ পরোক্ষ
এই সেই আগামীকাল পরদিন এখানে সেখানে
ইহা তাহা গতকাল আগের দিন এখন তখন
সে গতকল্য পূর্বদিন আজ সেদিন
ওখানে ঐখানে এমন তেমন এটা ওটা
আসা যাওয়া আপনি তিনি

এখান থেকে সেখান থেকে তোমার আমার এত অত

আরো পড়তে পারেন

৫. অর্থ-সঙ্গতি রক্ষার জন্য পরোক্ষ উক্তিতে ক্রিয়াপদের পরিবর্তন হতে পারে। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি : রহমান বলল, “আমি এক্ষুনি আসছি।”

পরোক্ষ উক্তি : রহমান বলল যে, সে তক্ষুনি যাচ্ছে।

৬. আশ্রিত খণ্ডবাক্যের ক্রিয়ার কাল পরোক্ষ উক্তিতে সবসময় মূল বাক্যাংশের ক্রিয়ার কালের ওপর নির্ভর করে না। যেমন:

প্রত্যক্ষ উক্তি : করিম বলেছিল, "আমি বাজারে যাচ্ছি।"

পরোক্ষ উক্তি : করিম বলেছিল যে, সে বাজারে যাচ্ছে।

৭. প্রত্যক্ষ উক্তিতে কোনো চিরন্তন সত্যের উদ্ধৃতি থাকলে পরোক্ষ উক্তিতে কালের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন: 

প্রত্যক্ষ উক্তি :  শিক্ষক বললেন, “পৃথিবী গোলাকার।"

পরোক্ষ উক্তি : শিক্ষক বললেন যে, পৃথিবী গোলাকার।

প্রত্যক্ষ উক্তি : বৈজ্ঞানিক বললেন, "চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে।"

পরোক্ষ উক্তি : বৈজ্ঞানিক বললেন যে, চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে। 

৮. প্রশ্নবোধক, অনুজ্ঞাসূচক ও আবেগসূচক প্রত্যক্ষ উক্তিকে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তন করতে হলে প্রধান খণ্ডবাক্যের ক্রিয়াকে ভাব অনুসারে পরিবর্তন করতে হয়। যেমন:

প্রশ্নবোধক বাক্যে উক্তি পরিবর্তন

প্রত্যক্ষ উক্তি : শিক্ষক বললেন, “তোমরা কি ছুটি চাও?"

পরোক্ষ উক্তি : আমাদের ছুটি চাই কি না, শিক্ষক তা জিজ্ঞাসা করলেন।

প্রত্যক্ষ উক্তি : বাবা বললেন, “কবে পর্যন্ত তোমাদের ফল বের হবে?”

পরোক্ষ উক্তি : আমাদের ফল কবে পর্যন্ত বের হবে, বাবা তা জানতে চাইলেন।

অনুজ্ঞাসূচক বাক্যে উক্তি পরিবর্তন

প্রত্যক্ষ উক্তি : হামিদ বলল, “তোমরা আগামীকাল এসো।”

পরোক্ষ উক্তি : হামিদ তাদের পরদিন আসতে (বা যেতে) বলল।

প্রত্যক্ষ উক্তি : তিনি বললেন, “দয়া করে ভেতরে আসুন।"

পরোক্ষ উক্তি : তিনি (আমাকে) ভেতরে যেতে অনুরোধ করলেন।

আবেগসূচক বাক্যে উক্তি পরিবর্তন

প্রত্যক্ষ উক্তি : লোকটি বলল, “বাঃ। পাখিটি তো চমৎকার।"

পরোক্ষ উক্তি : লোকটি আনন্দের সাথে বলল যে, পাখিটি চমৎকার।

প্রত্যক্ষ উক্তি : ভিখারিণী দুঃখের সাথে বলল, “শীতে আমরা কতই না কষ্ট পাচ্ছি।"

পরোক্ষ উক্তি : ভিখারিণী দুঃখের সাথে বলল যে, তারা শীতে বড়ই কষ্ট পাচ্ছে।

৯. প্রত্যক্ষ উক্তি থেকে পরোক্ষ উক্তিতে পরিবর্তন করলে যদি দুই প্রকার অর্থ বোঝায়, তাহলে বন্ধনীর মধ্যে ঠিক অর্থ বুঝিয়ে দিতে হবে। যেমন :

প্রত্যক্ষ : নীলা ফারজানাকে বলল, “আমি ভাত খাইনি।”

পরোক্ষ : নীলা ফারজানাকে বলল যে সে (নীলা) ভাত খায়নি।

আমাদের শেষ কথা

আশা করি উক্তি পরিবর্তন গুলো তোমার সফলতায়  অবদান রাখবে। তোমার কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমাদেরকে কমেন্টে বা ফেসবুকের জানাতে পারো। পড়াশোনা সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল পেতে আমাদের সঙ্গেই থাক। ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিও। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আল্লাহ হাফেজ...

আরো পড়তে পারেন

জুয়েল

আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। শিক্ষা সকলের অধিকার। আসুন আমরা প্রত্যেক শিশুর স্বপ্ন জয়ের সারথি হই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন