স্বাধীনতা
লাভের এত বছর পরেও
আমাদের কোন অভাব দূর তো হ'লই
না, বরং যত দিন যাচ্ছে
ততই যেন জাতি হিসেবে আমরা মর্যাদাহীন হয়ে পড়ছি, নিস্তেজ হয়ে পড়ছি। বুক ভরা আশা-স্বপ্ন আজ রূপান্তরিত হয়েছে
গ্লানী ও হতাশায়। সম্মান,
জাতীয়তাবোধ, মর্যাদাবোধ, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ
এ সব কিছুই যেন
বিধ্বস্ত। এক কথায়, বিবেক
আজ বিভ্রান্ত। সুবিধাবাদ এবং অযোগ্যতার মহড়ায় গোটা জাতি আজ নীরব নিশ্চল
অসহায় জিম্মী। কথাগুলো বলেছেন আজ থেকে অনেক
বছর আগে ৯ নং সেক্টরের
সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিল তার অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা বইয়ে। যা আজকের সময়েও
সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমরা কতটুকুই জানি? কার মাধ্যমে জানতে হবে আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস? সেটি কি তথাকথিত চেতনাধারীদের মাধ্যমে যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় লুকিয়ে ছিল ইঁদুরের গর্তে না কি তাদের মাধ্যমে যারা ছিল রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা।অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা বইয়ের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন ইতিহাসের সেই কালো সত্য যা আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা |
অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা বই রিভিউ
এটা
ইতিহাস স্বীকৃত সত্য যে, ৭০ সালের নির্বাচনে
বিজয়ী আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় বসতে না দেওয়ার মূল
কারণ ছিল ৬ দফা। ৬
দফায় এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা থাকলেও তা ১৯৪০ সালের
লাহোর প্রস্তাবের বিরোধী ছিল না। তথাকথিত প্রগতিবাদী চেতনা ব্যবসায়ীরা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে ইসলাম ও মুসলিম জাতীয়তাবাদের
প্রতিপক্ষ বানিয়ে নিয়েছে। তাদের জানা উচিৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভেই বর্তমান বাংলাদেশ ভূমিষ্ট হয়েছে। অর্থ্যাৎ বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ কোনো ভাবেই মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রতিপক্ষ নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যারা আজ এদেশে ইসলামের
নিকুচি করার হাতিয়ার বানিয়ে নিয়েছে এসকল তথাকথিত প্রগতিবাদীরাই হলো সত্যিকারের প্রতিক্রিয়াশীল। মেজর জলিল অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা বইটির মাধ্যমে তথাকথিত প্রগতিবাদীদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন।
যদি
পাকিস্তানি সামরিক জান্তা সরকার ৬ দফা দাবি
মেনে নিয়ে ৭০ সালের নির্বাচনের
ফলাফলের ভিত্তিতে আওয়ামীলীগকে সরকার গঠন করার সুযোগ দিত তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তানের) ইতিহাস কেমন হতো? যেটাকে মুক্তিযুদ্ধ বলা হয় সেটা কি
আসেলেই মুক্তিযুদ্ধ নাকি পর্দার আড়ালে ঘটে যাওয়া ষড়যন্ত্রের মঞ্চায়ন? এসকল প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টাই করেছেন মেজর জলিল তাঁর অরক্ষিত স্বাধীনাতাই পরাধীনতা বইয়ে।
আরো পড়তে পারেন
আমাদের স্কুল কলেজে যে ইতিহাস শিক্ষা দেওয়া হয় তা কতটুকু সত্য আর কতটুকু বিকৃত?আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাসই রচিত হয়েছে একটা পক্ষকে সন্তুষ্ট করার নিমিত্তি আর ইতিহাস রচিত হয়েছে তাদের মাধ্যমে যারা ছিল ইতিহাস সংঘটিত হওয়ার স্থান কাল থেকে অনেকে দূরে। তাই আমরা সত্যটা জানতে পারি না। কিংবা সত্যটা আমাদের কাছে উপস্থাপন করা হয় বিকৃত ভাবে। কিংবা আমাদেরকে ততটুকুই জানানো হয় যতটুকু জানানো তাদের ইচ্ছা। অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা বইটির মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা সেই ইতিহাস।
মেজর জলিল ছিলেন রণাঙ্গনের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কাছ থেকে দেখেছেন মুক্তিযুদ্ধ। একজন দেশপ্রেমিক যোদ্ধা এবং একজন রাজনৈতিক সচেতন নাগরিক হিসেবে কাছ থেকে দেখেছেন ৭১ এর পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অনেক ঘটনা প্রবাহের সাথে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তার অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা বইটি সেই ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহের স্বাক্ষ্য দলিল। এ বইয়ের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা যাদেরকে কথায় কথায় স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বলে গালি দেয়া তারা কারা এবং চেতনাধারি চেতনা ব্যবসায়ীরাই বা কারা?
চেতনাধারীরা
আমাদের ইতিহাসের যতটুকু জানায় আমরা ততটুকই জানি। কিন্তু ইতিহাসের এমন অনকে প্রশ্ন আছে যার উত্তর আমাদের জানা নেই। নিঃসন্দেহে ১৯৭১ আমাদের জন্য গর্বের। কিন্তু ১৯৭১ সালে কী হয়েছিল পর্দার
আড়ালে তার কতটুকুই বা আমরা জানি?
অরক্ষিত
স্বাধীনতাই পরাধীনতা বইটিতে বেশ কিছু প্রশ্ন এবং বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর আছে যা আপনাকে নতুন
করে ভাবতে শেখাবে। আপনার সামনে ইতিহাসের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। যেমন: বইটিতে একটি প্রশ্ন আছে, দেশ প্রেমিক কারা? আমরা মুক্তিযোদ্ধারা না রাজাকার - আলবদর
হিসেবে পরিচিত তারা?
৬
দফার ভিত্তিতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ বিজয় লাভ করে। ৭০ সালে নির্বাচিত
সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলাফলই
ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। তাই অন্য অনেক কারণ থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের মূল ভিত্তি বলা যায় ৬ দফা দাবি।
কিন্তু ৬ দফার কোথাও
ধর্মনিরপেক্ষতার সামান্যতম ইঙ্গিত পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
আজকে
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যবসায়ীরা মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের প্রতিপক্ষ বানিয়েছে। অরক্ষিত স্বাধীনাতাই পরাধীনতা বইটির মাধ্যমে পাঠক জানতে পারবে মুক্তিযুদ্ধ কি আসলেই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ
দ্বারা উজ্জীবিত ছিল না কি ছিল
অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে এদেশের গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রাম। বইটিতে বলা হয়েছে,
" সত্তরের শেষ এবং একাত্তরের শুরুর সেই অগ্নিঝরা দিনগুলোতে পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামী জনগণের মাঝে বিজাতীয়দের চরম ঘৃণা ও বিদ্বেষ পরিলক্ষিত হলেও ইসলাম ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ মোটেও পরিলক্ষিত হয়নি, অথবা ধর্মহীনতা আমাদের পেয়ে বসেনি। তৎকালীন সময়ে কট্টর আওয়ামীলীগার বলে পরিচিত নেতা কর্মীদের মুখে 'ধর্মনিরপেক্ষতার' নাম গন্ধও শুনতে পাইনি। .......... যুদ্ধের রক্তাক্ত ময়দানেও আমি মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেছি বাকায়দা নামায পড়তে, দরূদ পাঠ করতে।........ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বের ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধের পরের ইসলাম - এর মধ্যে হঠাৎ করে এমন কি ঘটে গেল যাতে ইসলামের কথা শুনলেই কোন কোন মহল পাগলা কুকুরের মত খিঁচিয়ে উঠেন।"