ভাষার বিভিন্ন বৈচিত্রের কারণে ভাষা শ্রুতিমধুর হয়। বাংলা ভাষার বৈচিত্রের মধ্যে অন্যতম হলো দ্বিরুক্ত শব্দ। দ্বিরুক্ত শব্দ থেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। নিচের আর্টিকেলে দ্বিরুক্ত শব্দ কাকে বলে? দ্বিরুক্ত শব্দ কত প্রকার এবং দ্বিরুক্ত শব্দ মনে রাখার কৌশল ইত্যাদি সম্বন্ধে বর্ণনা করা হয়েছে।
দ্বিরুক্ত শব্দ তিন প্রকার |
দ্বিরুক্ত শব্দ কাকে বলে
দ্বিরুক্ত শব্দের অর্থ দুবার উক্ত হয়েছে এমন। বাংলা ভাষায় কোনো কোনো শব্দ, পদ বা অনুকার শব্দ একবার
ব্যবহার করলে যে অর্থ প্রকাশ করে, সেগুলো দুবার ব্যবহার করলে অন্য কোনো সম্প্রসারিত
বা সংকুচিত অর্থ প্রকাশ করে। এ ধরনের শব্দের পরপর দুবার প্রয়োগকেই দ্বিরুক্ত শব্দ
বলে। দ্বিরুক্ত শব্দের অপর নাম শব্দদ্বৈত। যেমন : ‘আমার জ্বর জ্বর লাগছে।' অর্থাৎ ঠিক জ্বর নয়,
জ্বরের ভাব অর্থে প্রয়োগ ।
দ্বিরুক্ত শব্দ কত প্রকার
দ্বিরুক্ত
শব্দ বলতে দ্বিরুক্ত শব্দ. পদ ও ধ্বনিকে বোঝায়। তাই দ্বিরুক্ত শব্দকে মূলত তিন প্রকার করা যায়। যথা :
১.
শব্দের দ্বিরুক্তি ২. পদের দ্বিরুক্তি ও ৩. অনুকার/ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি
১. শব্দের দ্বিরুক্তি কাকে বলে
একই
শব্দ দুবার উচ্চারিত হয়ে কিংবা এক শব্দের সঙ্গে অন্য শব্দের যোগে যে দ্বিরুক্ত শব্দ
গঠিত হয়, তাকে শব্দের দ্বিরুক্তি বা শব্দদ্বৈত বলে । যেমন : ভালো ভালো, বড় বড়, ফোঁটা
ফোঁটা ইত্যাদি।
২. পদের দ্বিরুক্তি কাকে বলে
একই
পদ দুবার ব্যবহার হলে তাকে পদের দ্বিরুক্তি বলে। যেমন : ঘরে ঘরে, দেশে দেশে, মনে
মনে ইত্যাদি।
৩. অনুকার দ্বিরুক্তি কাকে বলে
কোন
কিছুর স্বাভাবিক বা কাল্পনিক অনুকৃতিবিশিষ্ট শব্দের রূপকে অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক শব্দ
বলে। এ জাতীয় ধ্বন্যাত্মক শব্দের দুবার প্রয়োগকে অনুকার বা ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি
বলে। যেমন : মিউমিউ, ঘেউঘেউ ইত্যাদি
শব্দাত্মক দ্বিরুক্তি বা শব্দদ্বৈত গঠনের নিয়ম
শব্দাত্মক
দ্বিরুক্তি বিভিন্নভাবে গঠিত হয়। যেমন:
১. একই শব্দের পুনরাবৃত্তির দ্বারা অবিকল, প্রকৃত বা অবিকৃত দ্বিরুক্তি : একই শব্দ দুইবার ব্যবহার করা হয় এবং দুটি শব্দই অবিকৃত থাকে। যেমন :
ক.
বিশেষ্যের অবিকল দ্বিরুক্তি : ফোঁটা ফোঁটা, ভার ভার; সারি সারি, দিস্তা দিস্তা, বছর
বছর, দিন দিন, ভয় ভয়, গাড়ি গাড়ি, চোর চোর, বিন্দু বিন্দু ।
খ.
বিশেষণের অবিকল দ্বিরুক্তি : ঘন ঘন, ভালো ভালো, কালো কালো, লাল লাল, বড় বড়, ছোট ছোট,
বাছা বাছা, ভূরি ভূরি, শত শত, কাঁচা কাঁচা ।
গ.
সর্বনামের অবিকল দ্বিরুক্তি : যা যা, যে যে, কে কে, কী কী, কারা কারা, যারা যারা।
ঘ.
অব্যয়ের অবিকল দ্বিরুক্তি : আর-আর, না-না, ছি-ছি, হ্যাঁ-হ্যাঁ, হায়-হায়।
২.
সমার্থক বা সহচর শব্দযোগে : মূল শব্দের প্রতিশব্দকে সহচর শব্দ বলে । সহচর শব্দ স্বতন্ত্রভাবে
মূল শব্দের একই অর্থ প্রকাশ করে। যেমন : জীবজন্তু, কাজ-কর্ম, জাঁক-জমক, ধন- দৌলত, খেলা-ধুলা,
লালন-পালন, খোঁজ-খবর, গা-গতর, ছাই-ভস্ম, চড়-চাপড়, ধর-পাকড়, পাঁজি-পুঁথি, রীতি-নীতি,
ঢাক-ঢোল, শোর-গোল, ভয়-ডর, ভুল-চুক, মাথা-মুণ্ডু।
৩.
ভিন্নার্থক বা অনুচর শব্দযোগে : মূল শব্দের পরে যুক্ত ভিন্নার্থক শব্দকে অনুচর শব্দ
বলে। যেমন : পথঘাট, দোকানপাট, হাতিঘোড়া, লোক-লক্ষর, পাইকপেয়াদা, হাঁড়িকুঁড়ি, ঘটীবাটী,
খালবিল, আলাপ-সালাপ, তালাচাবি, অল্পস্বল্প, চুরি-চামারি, শিলনোড়া, দালানকোঠা, চালচুলা,
অস্ত্রশস্ত্র, কলামুলা।
8.
বিপরীতার্থক বা প্রতিচর শব্দযোগে : মূল শব্দের বিপরীতার্থক শব্দকে প্রতিচর শব্দ বলে।
প্রতিচর শব্দ পৃথক অবস্থায় মূল শব্দের বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে। কিন্তু মূল শব্দের
সঙ্গে যুক্ত হয়ে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠন করলে, ওই দ্বিরুক্ত শব্দ একটি বিশেষ অর্থ প্রকাশ
করে। যেমন : বিকিকিনি, রদবদল, দিনরাত, লেন-দেন, আয়-ব্যয়, দেনা-পাওনা, টাকা-পয়সা,
ধনী-গরিব, বামুনচাঁড়াল, রাজাউজির নরনারী, হিন্দু-মুসলমান, হারজিত, আদিঅন্ত, শীতগ্রীষ্ম,
ভালমন্দ।
৫.
দ্বিরুক্ত শব্দের একটির আংশিক ধ্বনির পরিবর্তন দ্বারা অর্থাৎ বিকারজাত শব্দযোগে :
ক.
মূল স্বরের আদিস্বরের পরিবর্তনের মাধ্যমে : যেমন: চুপচাপ, সোজাসুজি, চিকনচাকন, নাদুসনুদুস,
ফুটাফাটা, মিট-মাট, ফিট-ফাট, গল্প-স্বল্প, তোড়জোড়।
খ.
মূল শব্দের অন্ত্যস্বরের পরিবর্তনের মাধ্যমে : যেমন: হাতাহাতি, গলাগলি, বলাবলি, হাঁটাহাঁটি,
সরাসরি, চটাচটি, আধাআধি পিঠাপিঠি মারামারি।
গ.
মূল শব্দের ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তনের মাধ্যমে : যেমন : লুচিমুচি, তেলমেল, বইটই, হাবুডুবু,
ভাতটাত, খাতাফাতা, ফলটল, মুড়িসুড়ি, কাজফাজ।
ঘ.
মূল শব্দের স্বরধ্বনির স্থলে ব্যঞ্জনধ্বনিযোগে : যেমন: আশপাশ, উসখুস, আঁকুপাঁকু, অদলবদল,
অলিগলি, আলুথালু, এলোমেলো, আঁটসাঁট, আনাচকানাচ।
আরো পড়তে পারেন
যুগ্মরীতিতে দ্বিরুক্ত শব্দের গঠন
যুগ্মশব্দ কাকে বলে
বাংলা ভাষায় প্রচলিত অসংখ্য জোড়া শব্দকে যুগ্মশব্দ বা শব্দদ্বৈত বলা হয়। যেমন
: চেনা চেনা, মনে মনে, শুনে শুনে।
একই
শব্দ ঈষৎ পরিবর্তন করে দ্বিরুক্ত শব্দ গঠনের রীতিকে বলে যুগ্মরীতি।
যুগ্মরীতিতে
দ্বিরুক্ত শব্দ গঠনের কয়েকটি নিয়ম। যেমন :
ক.
শব্দের আদি স্বরের পরিবর্তন করে : চুপচাপ, মিটমাট, জারিজুরি।
খ.
শব্দের অন্ত্যস্বরের পরিবর্তন : করে হাতাহাতি, সরাসরি, জেদাজেদি।
গ.
সমার্থক সহচর শব্দ যোগে : চালচলন, রীতিনীতি, বনজঙ্গল, ভয়ডর।
ঘ.
ভিন্নার্থক শব্দ যোগে : ডালভাত, তালাচাবি, পথঘাট, অলিগলি।
ঙ.
বিপরীতার্থক শব্দ যোগে : আসা-যাওয়া, জন্ম-মৃত্যু, আদান-প্রদান ।
চ.
দ্বিতীয় বার ব্যবহারে ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তনে : ছটফট, নিশপিশ।
বাগ্ধারায় দ্বিরুক্ত শব্দের প্রয়োগ
i.
ছেলেটিকে চোখে চোখে রেখো। (সতর্কতা)
ii.
ফুলগুলো তই আনরে বাছা বাছা ( ভাবের প্রগাঢ়তা)
iii.
থেকে থেকে শিশুটি কাঁদছে। (কালের বিস্তার)
iv.
লোকটা হাড়ে হাড়ে শয়তান। (আধিক্য)
v.
খাঁচার ফাঁকে ফাঁকে, পরশে মুখে মুখে, নীরবে চোখে চোখে চায়।
২. পদের দ্বিরুক্তি
বাংলা
ভাষায় কখনও কখনও বাক্যমধ্যে বিভক্তিযুক্ত একটি পদের পুনরাবৃত্তি হয়। একে পদদ্বৈত
বা পদের দ্বিরুক্তি বলে। যেমন : রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়। দুই বন্ধুতে গলায় গলায়
ভাব। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ঔষুধ হয়।
পদের দ্বিরক্তির নিয়ম
পদের
দ্বিরুক্তি নানা রকমের হতে পারে। যেমন :
ক.
দুটি পদে একই বিভক্তি প্রয়োগ করা হয়, শব্দ দুটি ও বিভক্তি অপরিবর্তিত থাকে। যেমন
: ঘরে ঘরে লেখাপড়া হচ্ছে। দেশে দেশে ধন্য ধন্য করতে লাগল। মনে মনে আমিও এ কথাই ভেবেছি।
ভালয় ভালয় কেটে পড়। মেঘে মেঘে কেটে গেলো বেলা। ঘরে ঘরে অন্নাভাব, গাছে গাছে ফুল
ফুটেছে। দিনে দিনে সে বেড়ে উঠছে।
খ.
দ্বিতীয় পদের আংশিক ধ্বনিগত পরিবর্তন ঘটে, কিন্তু পদ বিভক্তি অবিকৃত থাকে। যেমন :
চোর হাতে নাতে ধরা পড়েছে। আমার সন্তান যেন থাকে যেন দুধে ভাতে
পদের দ্বিরুক্তির প্রয়োগ
বিশেষ্য শব্দযুগলের বিশেষণ রূপে ব্যবহার
ক.
আধিক্য বোঝাতে : রাশি রাশি ধন, ধামা ধামা ধান ।
খ.
সামান্য বোঝাতে : আমি আজ জ্বর জ্বর বোধ করছি। দেখেছো তার কবি কবি ভাব ।
গ.
ক্রিয়া বিশেষণ : ধীরে ধীরে যায়, ফিরে ফিরে চায়।
ঘ.
অনুরূপ কিছু বোঝাতে : তার সঙ্গী সাথী কেউ নেই ।
ঙ.
আগ্রহ বোঝাতে : ও দাদা দাদা বলে কাঁদছে।
চ.
পরম্পরতা বা ধারাবাহিকতা বোঝাতে : তুমি দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছ। তুমি বাড়ি বাড়ি
হেঁটে চাঁদা তুলেছ।
বিশেষণ
শব্দযুগলের বিশেষণ রূপে ব্যবহার
ক.
আধিক্য বোঝাতে : ভালো ভালো আম নিয়ে এসো। ছোট ছোট ডাল কেটে ফেল ।
খ.
তীব্রতা বা সঠিকতা বোঝাতে : গরম গরম জিলাপি, নরম নরম হাত।
গ.
সামান্য বোঝাতে : উড়ু উড়ু ভাব, কালো কালো চেহারা।
সর্বনাম
শব্দ
ক.
বহুবচন বা আধিক্য বোঝাতে : কে কে এল? কেউ কেউ বলে ।
ক্রিয়াবাচকশব্দ
ক.
বিশেষণ রূপে : এ দিকে রোগীর তো যায় যায় অবস্থা । তোমার নেই নেই ভাব গেল না ।
খ.
স্বল্পকাল স্থায়ী বোঝাতে : দেখতে দেখতে আকাশ কাল হয়ে এল।
গ.
ক্রিয়া বিশেষণ : দেখে দেখে যেও । ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শুনলে কী ভাবে?
ঘ.
পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে : ডেকে ডেকে হয়রান হয়েছি।
অব্যয়ের
দ্বিরুক্তি
ক.
ভাবের গভীরতা বোঝাতে : তার দুঃখ দেখে সবাই হায় হায় করতে লাগল। ছি ছি, তুমি কী
করেছ ?
খ.
পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে : বার বার সে কামান গর্জে উঠল
গ.
বিশেষণ বোঝাতে : পিলসুজে বাতি জ্বলে মিটির মিটির।
ঘ.
অনুভূতি বা ভাব বোঝাতে : ভয়ে গা ছম ছম করছে। ফোঁড়াটা টন টন করছে
ঙ.
ধ্বনিব্যঞ্জনা : ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর ।
পদাত্মক দ্বিরুক্তির গঠন কাকে বলে
বিভক্তি
যুক্ত পদের দুইবার ব্যবহারকে পদাত্মক দ্বিরুক্তি বলা হয় । পদাত্মক দ্বিরুক্ত দুইভাবে
গঠিত হয় । যথা :
ক.
একই পদের পুনরাবৃত্তি : একই পদের অবিকৃত অবস্থায় দুবার ব্যবহার হয় । যেমন : ভয়ে
ভয়ে এগিয়ে গেলাম। হাটে হাটে চলছে অবিরাম বিকিকিনি ৷
খ.
যুগ্মরীতির সাহায্যে : যুগ্মরীতিতে গঠিত দ্বিরুক্ত পদের ব্যবহার করে। যেমন : হাতে নাতে,
আকাশে-বাতাসে, কাপড়-চোপড়, দলে-বলে ইত্যাদি।
৩. ধ্বন্যাত্মক/অনুকার দ্বিরুক্তি
কোন
কিছুর স্বাভাবিক বা কাল্পনিক অনুকৃতিবিশিষ্ট শব্দের রূপকে ধ্বন্যাত্মক শব্দ বলে। এ
জাতীয় ধ্বন্যাত্মক শব্দের দুবার প্রয়োগের নাম ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি। ধ্বন্যাত্মক
শব্দকে ধ্বন্যাত্মক অব্যয় বা অনুকার অব্যয়ও বলে। ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি দ্বারা বহুত্ব,
আধিক্য ইত্যাদি বোঝায়।
ধ্বন্যাত্মক
দ্বিরুক্ত শব্দ কয়েকটি উপায়ে গঠিত হয়। যেমন :
ক.
মানুষের ধ্বনির অনুকার : ভেউ ভেউ – মানুষের উচ্চ স্বরে কান্নার ধ্বনি। ট্যা ট্যা,
হি হি ইত্যাদি।
খ.
জীবজন্তুর ধ্বনির অনুকার : ঘেউ ঘেউ (কুকুরের ধ্বনি), কা কা (কাকের ডাক), মিউ মিউ (বিড়ালের
ডাক), কুহু কুহু (কোকিলের ডাক) ইত্যাদি।
গ. বস্তুর
ধ্বনির অনুকার : ঘচাঘচ (ধান কাটার শব্দ)। এরূপ- মড় মড় (গাছ ভেঙে পড়ার শব্দ), ঝম
ঝম (বৃষ্টি পড়ার শব্দ), হু হু (বাতাস প্রবাহের শব্দ) ইত্যাদি।
ঘ.
অনুভূতিজাত কাল্পনিক ধ্বনির অনুকার : ঝিকিমিকি (ঔজ্জ্বল্য), ঠা ঠা (রোদের তীব্রতা),
কুট কুট ধ্বনির অনুকার (শরীরে কামড় লাগার মত অনুভূতি)। অনুরূপভাবে- মিন মিন, পিট পিট,
ঝি ঝি ইত্যাদি ।
ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্তি গঠন
ক.
একই (ধ্বন্যাত্মক) শব্দের অবিকৃত প্রয়োগ : ধক ধক, ঝন ঝন, পট পট ।
খ.
প্রথম শব্দটির শেষে ‘আ’ যোগ করে : গপাগপ, টপাটপ, পটাপট ।
গ.
দ্বিতীয় শব্দটির শেষে ‘ই’ যোগ করে : ধরাধরি, ঝমঝমি, ঝনঝনি।
ঘ.
যুগ্মরীতিতে গঠিত ধ্বন্যাত্মক শব্দ : কিচির মিচির (পাখি বা বানরের শব্দ),
টাপুর টুপুর (বৃষ্টি পতনের শব্দ), হাপুস হুপুস (গোগ্রাসে কিছু খাওয়ার শব্দ)।
ঙ.
আনি-প্রত্যয় যোগেও বিশেষ্য দ্বিরুক্ত গঠিত হয় : পাখিটার ছটফটানি দেখতে কষ্ট হয়।
তোমার বকবকানি আর ভালো লাগে না
বিভিন্ন
পদ রূপে ধ্বন্যাত্মক দ্বিরুক্ত শব্দের ব্যবহার :
ক.
বিশেষ্য : বৃষ্টির ঝমঝমানি আমাদের অস্থির করে তোলে ।
খ.
বিশেষণ : 'নামিল নভে বাদল ছলছল বেদনায়।'
গ.
ক্রিয়া : কলকলিয়ে উঠল সেথায় নারীর প্রতিবাদ।
ঘ.
ক্রিয়া বিশেষণ : ‘চিকচিক করে বালি কোথা নাহি কাদা ।'
দ্বিরুক্ত শব্দের ব্যবহার ও অর্থ প্রকাশের ক্ষমতা
দ্বিরুক্ত
শব্দের মাধ্যমে এমনভাবে ভাব প্রকাশ করা যায় যেভাবে অন্য কোনো উপায়ে ভাবটা প্রকাশ
করা সম্ভব নয়। নিম্নের উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যাবে দ্বিরুক্ত শব্দ কতভাবে অর্থ প্রকাশ
করতে পারে।
ক.
ব্যাপ্তি বা আধিক্য বোঝাতে : নীল মাছরাঙা পাখি শ্যাওলার ধারে ধারে মাছ খুঁজতে খুঁজতে
একবার ওঠে, একবার বসে। পাখির দল শেষ বেলায় ঝোপে ঝোপে কলরব করছে। নদীর জলে ঠান্ডা ঠান্ডা
গন্ধ বেরুচ্ছে। গাছের মাথায় মাথায় যেন সে আগুনের শোভা । এক এক স্থানে নৌকা তীরের
অত্যন্ত নিকট দিয়ে যাচ্ছে।
খ.
প্রায় বা সামান্যতা বোঝাতে : আমার জ্বর জ্বর বোধ হচ্ছে।
গ.
ক্রিয়া বিশেষণ হিসেবে : মনে মনে তুলনা করে দেখলাম। দু একটা পাখি ধাপে ধাপে সুর উঠিয়ে
কোথায় নিয়ে তোলে। কৃষক বধূ মাঝে মাঝে সলজ্জভাবে আমাদের নৌকার দিকে চাইছে।
ঘ.
ধারাবাহিকতা বোঝাতে : পাতায় পাতায় পড়ে নিশির শিশির। লোকটা দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা
করে বেড়াচ্ছে।
ঙ.
পৌনঃপুনিকতা বোঝাতে : লিখে লিখে হাত ব্যথা হয়ে গেলো। মায়াভরা এক রাজকন্যা দেখে
দেখে তার সাধ মেটে না ।
চ.
অনুভূতির ব্যঞ্জনা বোঝাতে : মাথাটা ঝিমঝিম করছে।
ছ. নির্দিষ্টতা বোঝাতে : যার যার টাকা তাকে তাকে বুঝিয়ে দাও।
আমাদের শেষ কথা
আশা করি দ্বিরুক্ত শব্দ তোমার সফলতায় অবদান রাখবে। তোমার কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমাদেরকে কমেন্টে বা ফেসবুকের জানাতে পারো। পড়াশোনা সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল পেতে আমাদের সঙ্গেই থাক। ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিও। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আল্লাহ হাফেজ...