ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় পদাশ্রিত নির্দেশকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, কোনও বিশেষ্য দ্বারা দ্যোতিত পদার্থের রূপ বা প্রকৃতি অথবা তৎসম্বন্ধে বক্তার মনের ভাব প্রকাশ করিবার একটি বিশেষ উপায় বাঙ্গালা ভাষায় আছে। টা, টী (টি), টুকু, টুক, খানা, খানী (খানি), জন প্রভৃতি কতকগুলি শব্দ বা শব্দাংশ আছে, যেগুলি বিশেষ্যের সহিত (অথবা বিশেষ্যের পূর্বে ব্যবহৃত সংখ্যাবাচক বিশেষণের সহিত) সংযুক্ত হইয়া যায়, এবং পদার্থ বা বস্তুর গুণ বা প্রভৃতি নির্দেশ করে।
পদাশ্রিত শব্দ সাধারণত পদের কোথায় বসে |
এইরূপ
শব্দ বা শব্দাংশকে পদাশ্রিত নির্দেশক বলা যাইতে পারে। বস্তুত, বিশেষ্য ও সর্বনাম পদকে
নির্দিষ্ট করার জন্য এদের পরে যে কতকগুলো শব্দ বা শব্দখণ্ড ব্যবহৃত হয়, তাদের পদাশ্রিত
নির্দেশক বলে। যেমন : টা, টি, টুক, খানা, খানি, গাছা, গাছি ইত্যাদি। এই আর্টিকেলে পদাশ্রিত নির্দেশক কাকে বলে এবং পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
পদাশ্রিত নির্দেশক কাকে বলে
কয়েকটি অব্যয় বা প্রত্যয়
কোনো না কোনো পদের আশ্রয়ে বা পরে সংযুক্ত হয়ে নির্দিষ্টতা জ্ঞাপন করে, এগুলোকে পদাশ্রিত
অব্যয় বা পদাশ্রিত নির্দেশক বলে। যেমন : টা, টি, খানা, খানি, গাছা, গাছি ইত্যাদি।
বাংলায় নির্দিষ্টতা জ্ঞাপক প্রত্যয় ইংরেজি Definite Article "The" এর স্থানীয়।
বচনভেদে পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার
বচনভেদে পদাশ্রিত নির্দেশকের
ব্যবহার ভিন্ন হয়। যেমন :
ক. একবচনে- টা, টি, খানা,
খানি, পাছা, গাছি ইত্যাদি নির্দেশক ব্যবহৃত হয়। যেমন : টাকাটা, বাড়িটি, কাপড়খানা,
বইখানি, লাঠিগাছা, চুড়িগাছি।
খ. বহুবচনে- গুলি, গুলা,
গুলো, গুলিন প্রভৃতি নির্দেশক প্রত্যয় সংযুক্ত হয়। যেমন মানুষগুলি, লোকগুলো আমগুলো,
পটলগুলিন ইত্যাদি
গ. কোনো সংখ্যা বা পরিমাণের
স্বল্পতা বোঝাতে টে, টুক, টুকু, টুকুন, টো, গোটা ইত্যাদির প্রয়োগ হয়। যেমন: চারটে
ভাত, দুধটুকু, দুধটুকুন, দুটো ভাত, গোটা চারেক আম, দুধটুকু খেয়ে নাও, দুটো ভাত নিয়ে
আসো ইত্যাদি।
পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার
পদাশ্রিত নির্দেশক সাধারণত
পদের শেষে বসে। তবে কিছু কিছু পদাশ্রিত নির্দেশক বাক্যের শুরুতে বা পদের শুরুতেও বসে।
নিচে পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার বর্ণনা করা হলো
১. ক. ‘এক শব্দের সঙ্গে টা, টি যুক্ত হলে অনির্দিষ্টতা বোঝায়। যেমন : একটি
দেশ, সে যেমনই হোক দেখতে। কিন্তু অন্য সংখ্যাবাচক শব্দের সাথে টা, টি যুক্ত হলে নির্দিষ্টতা
বোঝায় । যেমন : তিনটি টাকা, দশটি বছর ।
খ. নিরর্থকভাবেও নির্দেশক
টা, টি-র ব্যবহার লক্ষণীয়। যেমন : সারাটি সকাল তোমার আশায় বসে আছি। ন্যাকামিটা এখন
রাখ।
গ. নির্দেশক সর্বনামের
পরে টা, টি যুক্ত হলে তা সুনির্দিষ্ট হয়ে যায়। যেমন : ওটি যেন কার তৈরি? এটা নয়
ওটা আন । সেইটেই ছিল আমার প্রিয় কলম ।
২. ‘গোটা’ বচনবাচক শব্দটির আগে বসে এবং খানা, খানি পরে বসে।
এগুলো নির্দেশক ও অনির্দেশক দুই অর্থেই প্রযোজ্য। ‘গোটা’ শব্দ আগে বসে এবং সংশ্লিষ্ট পদটি নির্দিষ্টতা না বুঝিয়ে অনির্দিষ্টতা
বোঝায়। যেমন : গোটা দেশটাই ছারখার হয়ে গেছে। গোটা দুই কমলালেবু আছে (অনির্দিষ্ট)।
দু খানা কম্বল চেয়েছিলাম (নির্দিষ্ট)। গোটা সাতেক আম এনো। একখানা বই কিনে নিও (অনির্দিষ্ট)।
কিন্তু কবিতায় বিশেষ অর্থে
‘খানি’ নির্দিষ্টার্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন : ‘আমি অভাগা এনেছি বহিয়া নয়ন জলে ব্যর্থ সাধনখানি ।
৩. টাক, টুক, টুকু, টো
ইত্যাদি পদাশ্রিত নির্দেশক নির্দিষ্টতা ও অনির্দিষ্টতা উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। যেমন
:
নির্দিষ্টতা : সবটুকু ওষুধই
খেয়ে ফেলো।
অনির্দিষ্টতা : পোয়াটাক
দুধ দাও ৷
৪. বিশেষ অর্থে নির্দিষ্টতা
জ্ঞাপনে কয়েকটি শব্দ ও উদাহরণ নিম্নরূপ :
কেতা : এ তিন কেতা জমির
দাম দশ হাজার টাকা মাত্র । দশ টাকার পাঁচ কেতা নোট ।
তা : দশ তা কাগজ দাও ৷
পাটি : আমার একপাটি
জুতো ছিঁড়ে গেছে ৷
বাক্যে পদাশ্রিত নির্দেশকের প্রয়োগ
ক. ওদের বাড়ির ছেলেটা
খায় এতটা, নাচে যেন বুড়ো বাঁদরটা; আর আমাদের বাড়ির ছেলেটি খায় এতটি, আর নাচে
যেন ঠাকুরটি।
খ. শিশুটির জন্যে কি তোমার
এতটুকুন মায়া নেই?
গ. কাগজখান হারিয়ে ফেলেছি,
তাই বইখানা আমার চাই।
ঘ. ওখানা চাই না, হেথায়
যেখানা আছে সেখানা চাই
ঙ. লাঠিগাছা সাথে নাও,
কাজে লাগবে। আনিয়াছি মালাগাছি।
চ. এতটুকু ছেলে কী তার
সাহস! দুধটুকু খেয়ে নাও ।
ছ. দুপাটি জুতো কাঁদায়
দেবে গেল ।
আমাদের শেষ কথা
আশা করি পদাশ্রিত নির্দেশক কাকে বলে এবং পদাশ্রিত নির্দেশকের ব্যবহার সম্পর্কে এই আর্টিকেলটি তোমার সফলতায় অবদান রাখবে। তোমার কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমাদেরকে কমেন্টে বা ফেসবুকের জানাতে পারো। পড়াশোনা সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল পেতে আমাদের সঙ্গেই থাক। ভাল লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানার সুযোগ করে দিও। ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। আল্লাহ হাফেজ...
আরো পড়তে পারেন